পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১২

রফিক সাহেব

রফিক সাহেব একজন ভ্রমন পিপাসু মানুষ।পেশায় একজন ব্যবসায়ী হলে ও সময় সুযোগ পেলে তিনি ভ্রমনের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যান।তবে রফিক সাহেব পাহাড়ি এলাকা ভ্রমন করতে বেশি প্রচন্দ করেন।কারন সাগর-নদী কিংবা বন-জঙ্গল চেয়ে জঙ্গল চেয়ে পাহাড় তাকে বেশি টানে।একদিন রফিক সাহেব একটি পাহাড়ি এলাকা ভ্রমন করতে আসেন।তখন ছিল শীত কাল।আর এলাকাটি ছিল স্থানীয় শহর থেকে একটু দূরে।সেখানে গিয়ে রফিক সাহেব একটি গেস্ট হাউজে উঠে।গেস্ট হাউজটি ছিল মেইন রোড থেকে প্রায় ৩ কি:মি রাস্তা।কয়েকটা দিন ভ্রমনের পর হঠাত্‍
একদিন অফিস থেকে রফিক সাহেবের ফোন আসে।যে করে হোক আজকের মধ্যে তাকে ফিরতে হবে।কারণ কালকে একটি গুরুত্বপূর্ন মিটিং আছে।এই খবর পেয়ে রফিক সাহেব তার সব কিছু ব্যগের মধ্যে গুছিয়ে নিলেন।তার পরে মনে মনে চিন্তা করলেন কোন মতে মেইন রোড দিয়ে বাসে করে পাশের শহরে যেতে পারলে হবে।সেখান থেকে তার গন্তব্যে যেতে আর কোন অসুবিধা হবেনা।রাত তখন অনেকটা ঘনিয়ে আসলো।রফিক সাহেব গেস্ট হাউজের গার্ড কে ডেকে জিগাস করলেন এখন মেইন রোডে বাস পাওয়া যাবে কি?গার্ড উত্তর দিলো এই রোডে রাত ১০ টা পর্যন্ত গাড়ি চলাচল করে।এই কথা শুনে রফিক সাহেব তার হাতের ঘড়ির দিকে তাকালেন,দেখেন রাত তখন আটটা বাজে।তাই তিনি এক হাতে ব্যগ ও অন্যহাতে একটি টর্চলাইট নিয়ে মেইন রোডের দিকে রওনা হলেন।যাওয়ার সময় মোটা দেখে একটি চাঁদর গায়ে জড়িয়ে নিলেন।গেস্ট হাউজের গার্ড অবশ্যই এই রাত্রি বেলায় তাকে যেতে মানা করেছিল।কিন্তু রফিক সাহেব তার কথা শুনেনি।ঘুট ঘুটে অন্ধকারের মধ্যে আঁকাবাঁকা পথ ধরে রফিক সাহেব হাটতে শুরু করলেন।শীত রাত্রি তাই চারদিকে তখন ঘন কুয়াশায় ঢাকা।মাঝে মাঝে হিমেল হাওয়া এসে গায়ে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছিল। রাত সবে মাত্র আটটা কিংবা নয়টা কিন্তু এই পথে মনে হচ্ছে গভীর রাত নেমে এসেছে।রফিক সাহেব যখন মেইন রোডে এসে পৌঁছালেন রাত তখন ঠিক সাড়ে নয়টা।মেইন রোডে এসে রফিক সাহেব একটি বেলি ব্রিজের সামনে দাঁড়ালেন।পাহাড়ি অঞ্চল তাই চারপাশে কোন জনমানুষ নেই।চারদিকে শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোঁকার শব্দ।মাঝে মাঝে দূর থেক খেক শিয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছে।এমন পরিবেশে রফিক সাহেব কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন।হাতের থাকা টর্চলাইটি জ্বালিয়ে রাখলেন।মনে মনে বলতে লাগলেন এই রাত্রি বেলায় বের হওয়া ঠিক হয়নি।এক সময় রাত আরো গভীর হতে লাগলো।গায়ের তখন তিনি তীব্র শীত অনুভূব করতে লাগলেন।দীর্ঘক্ষন এভাবে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে এক সময় তিনি বিরক্তি হয়ে গেলেন।সীদ্ধান্ত নিলেন আবার গেস্ট হাউজে ফিরে যাবেন।এমন সময় হঠাত্‍ লক্ষ্য করলেন দূর থেকে মিটি মিটি আলো জ্বালিয়ে একটি বাস এদিকে আসছে।রফিক সাহেব হাত তুলতে বাসটি তার সামনে এসে থেমে গেল।বাসটির মধ্যে কোন হেলপার ছিলনা।রফিক সাহেব বাসে উঠে দেখলেন সামনের কয়েকটা সিট খালি পড়ে আছে আর পিছনে বসে থাকা যাত্রীরা সবাই ঘুমিয়ে আছে।রফিক সাহেব বাসের দরজা বরাবর একটি সীটে গিয়ে বসলো।তার পরে বাসটি আবার চলতে শুরু করলো।এভাবে কিছুক্ষন চলার পরে রফিক সাহেব লক্ষ্য করলেন বাসটি আবার সেই বেলি ব্রিজের উপর দিয়ে যাচ্ছে।প্রথমে এটিকে নিজের দেখার ভুল মনে করেছিলেন তিনি।কিন্তু পরে দেখলেন না বাসটি ঘুরে ফিরে একি পথ দিয়ে যাচ্ছে।এমন সময় হঠাত্‍ করে রফিক সাহেবের চোখ গেল বাসের সামনে থাকা লুকিং গ্লাসের দিকে।দেখলেন বাসের ড্রাইভার ঘুমিয়ে আছে কিন্তু বাসটি আপনা-আপনি চলছে।এই দৃশ্য দেখে রফিক সাহেব বসা অবস্থা থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন।তার পরে একটু ঘুরে পিছনের দিকে তাকালেন।দেখলেন পিছনে বসে থাকা যাত্রীরা তার দিকে ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর একটু একটু করে মৃদু হাসি দিচ্ছে।ব্যপারটা দেখে রফিক সাহেবের সারা শরীলের লোম খাড়া হয়ে গেল।এই তীব্র শীতের ও তার শরীল থেকে অজ্ররে ঘাম ঝড়তে লাগলো।রফিক সাহেব চিত্‍কার করে ড্রাইভার কে গাড়ি থামাতে বলেন।কিন্তু ড্রাইভার তার কথা শুনলো না।এমন সময় পিছন থেকে একটি ছোট্ট মেয়ে এসে বলে আঙ্কেল আপনি আমাদের সাথে যাবেন? মেয়েটির চেহার ছিল ফর্সা কিন্তু হাত গুলো কঙ্কালের মত।আর গায়ে ছিল সাদা কাপনের মত পোষাক যা দেখে রফিক সাহেবের ভয় আরো বেড়ে গেল।কিন্তু তার পরেও রফিক সাহেব সাহস করে জিগাস করেন কোথায়?
মেয়েটি উত্তর দিলো বহু দূরে যেখানা আমরা থাকি।
একথা বলেই মেয়েটি বাসের পিছন দিকে চলে গেল এবং সেখান বসে থাকা এক যাত্রী কাছ থেকে একটি কাগজের প্যাকেট এনে রফিক সাহেবের হাতে দিলো।প্যাকেটি হাতে নিয়ে রফিক সাহেব জিগাস করেন এর ভিতরে কি?
মেয়েটি উত্তরে বলে আপনি খুলে দেখেন।
প্যাকেটি খুলে রফিক সাহেব দেখে তার ভিতরে একটা সাদা কাপড়।এটা দিয়ে আমি কি করবো রফিক সাহেব জিগাস করলেন?
মেয়েটি আবার উত্তর দিলো এটা পড়ে আমাদের দেশে যেতে হয়।রফিক সাহেব বলে উঠলো নানা আমি তোমাদের সাথে যেতে চাইনা।এমন সময় পিছনে বসে থাকা যাত্রীরা হাতের ইশারায় রফিক সাহেব কে ডাকেতে শুরু করল।কিন্তু রফিক সাহেব তাদের কাছে যেতে অস্বীকার করে।এমন সময় পিছনে বসে থাকা যাত্রীরা সবাই বসা অবস্থা থেকে দাড়িয়ে গেল।এবং আস্তে আস্তে করে রফিক সাহেবের দিকে আসতে লাগলো।রফিক সাহেব আর কোন উপায় না দেখে চলন্ত গাড়ি থেকে দরজা দিয়ে লাফ দিল।এবং নিচে পড়ে বেহুশ হয়ে গেল।হুশ আসার পরে তিনি নিজেকে হাসপাতালের বিচানায় আবিষ্কার করলেন।গায়ের বিভিন্ন স্থানে তখন ব্যন্ডিজ লাগানো।এখানে কিভাবে আসলেন জানতে চাইলে এক ডাক্তার তাকে বলে আজ সকালে মেইন রোডের পাশে বেহুশ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে কিছু লোক তাকে এখানে ভর্তি করেছে।পরে তিনি ডাক্তারকে সব ঘটনা খুলে বলে।সব শুনে ডাক্তার বলে আপনার ভাগ্য ভালো তাই বেঁচে গেছেন।তানা হলে ঐ বাসে যারা উঠে তারা আর কখনো ফিরে আসেনা।বহু বছর আগে ঐ ব্রিজের পাশে একটি বাস দুর্ঘটনা কবলিত হয়।সে দুর্ঘটনায় বাসের সকল যাত্রী মারা যায়।তার পর থেকে নাকি মাঝে মাঝে গভীর রাতে একটি বাস ঐ রোডে চলতে দেখা যায়।এলাকার মানুষ বাসটি চেনে তাই কেউ ঐ বাসে উঠেনা।সুস্থ হয়ে রফিক সাহেব তার নিজ গন্তব্যে ফিরে গেলেন।কিন্তু সেখানে গিয়ে তার শুধু বার বার বাসের সেই ছোট্ট মেয়েটির কথা মনে হতে লাগলো।


গল্পটি কলকাতার বিখ্যাত লেখক শীর্ষেন্দু মুখার্জী হরেক রকম ভুতের গল্প পত্রিকায় প্রকাশিত মন্জিল সেন রচিত রাত্রির যাত্রী গল্পের অনুকরণে রচিত ॥ সামান্য কিছু পরিবর্তন ছাড়া প্রায় পুরো গল্পই হবহু আপনাদের কাছে তুলে ধরা হলো

লাইক কমেন্ট না করলে গল্প দেওয়ার উত্‍সাহ থাকে না ! এই গল্পটি অনেকটা অনিচ্ছাসত্ত্বে পোস্ট করলাম শুধুমাত্র আপনাদের জন্য ! অনিচ্ছার কারণ হলো পোস্টে আপনাদের লাইক কমেন্ট তেমন একটা পাওয়া যায় না তাই ॥ একজন মানুষ তার কাজের স্বীকৃতি না পেলে স্বভাবতই কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ॥ আপনারা আমাদের প্রায় ঐ পর্যায়ের দিকেই ঠেলে দিচ্ছেন !

1 টি মন্তব্য: