আমি দীপক। আগে ঢাকায় থাকতাম। বর্তমানে সিলেটে একটি ব্যাংকে কর্মরত আছি।
আজকে আপনাদের সাথে যেই ঘটনা শেয়ার করবো তা আমার নিজের চোখে দেখা। আমি তখন
ক্লাস ৪ এ পড়ি। থাকতাম তেজগাঁও রেলওয়ে কলোনিতে। স্কুল থেকে বাসায় এসেই
খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তাম। যেদিনের ঘটনা সেদিন বিকেলেও স্কুল থেকে
এসে খেলতে গেলাম।
আমাদের বাসার ঠিক সামনের বাসায় রাকিব নামে একটি
ছেলে থাকতো। আমার সমবয়সী। দারুন খ্যাপাটে মেজাজের এবং ডানপিটে। আমরা সবাই
তাকে একটু ভয় করতাম। যাই হোক, সেদিন আমরা ক্রিকেট খেলছিলাম। রাকিবদের বাড়ির
সামনে একটা মাঠের মতো জায়গা আছে। বেশি বড় না, কিন্তু আমাদের মতো বাচ্চাদের
জন্য যথেষ্ট। তার ঠিক ডান বাম পাশেই একটি বিরাট বড় বেল গাছ। সেই গাছে অনেক
বড় বড় বেল ধরত। তবে কেন জানি না, কেউ সেই গাছের বেল খেত না। এমনকি আমরা
ছোটরাও এড়িয়ে চলতাম গাছটিকে। আম্মু আব্বুরাও নিষেধ করতেন ঐ গাছের আসে পাশে
যেতে। যাই হোক, আমাদের মাঝে একটা ছেলে ছিল একটু বড় শরীরের। বড় শরীরের মানে
আমাদের সাথে একই ক্লাসে পড়ে কিন্তু দেখতে আমাদের চেয়ে বড়। সে হটাত করে একটি
শট করে বল ঐ বেল গাছের দিকে মারল। আমরা সবাই চেয়ে দেখলাম বলটা সোজা গিয়ে
বেল গাছের একটু ঘন জায়গায় পড়লো এবং নিচে পড়ার আর কোন আওয়াজ হল না। অর্থাৎ
বলটা আটকে গেলো।
আমাদের মধ্যে হুলুস্থুল পড়ে গেলো। এবার বল পাড়বে
কে? কেউ রাজি হলো না গাছের আশেপাশে যাবার। হটাত রাকিব এগিয়ে এলো এবং বলল
সে উঠবে গাছে। আমরা না করলাম সবাই। কিন্তু সে কথা শুনল না এবং এক পর্যায়ে
গাছে উঠে বসলো। বেল গাছে সাধারণত একটু উপর থেকে ডাল ছাড়ে (বড় হয়ে তাই
দেখেছি), কিন্তু এই গাছে তুলনামূলক নিচ থেকেই ডাল ছিল। রাকিব গাছে উঠে পড়লো
দ্রুত। ও একটু লম্বা ছিল আমাদের চেয়ে। বেশি দেরি হল না উপরে উঠে পড়তে।
আমরা পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম সেই গাছের দিকে। বেল গাছটা খুবই ঘন ছিল। এটা না
দেখলে কেউ বিশ্বাস করবেন না যে কতোটা ঘন। হটাত উপরে উঠার পর আমরা আর
রাকিবকে দেখতে পেলাম না। সে উপর থেকে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করতে লাগলো বলটা
কতো উপরে পড়েছে। আমরা তাকে দেখতে না পেয়ে বারবার বলতে লাগলাম মাঝ বরাবর
পড়েছে মনে হয়। সে প্রায় ৪-৫ মিনিট খুঁজাখুঁজি করেও বল পেল না। উপর থেকে বলল
নেমে যাই, বল দেখতে পাচ্ছি না। আমরা বললাম ঠিক আছে। ও নামার সময় হটাত আও
করে চেঁচিয়ে উঠলো এবং বলতে লাগলো ওরে ব্যথা পাচ্ছি। আমাকে ছাড়ো, আমাকে
ছাড়ো। বাঁচাও বাঁচাও। সে এভাবে চিৎকার করতে করতে খুব দ্রুত গাছ থেকে নেমে
এলো। এরপর যা দেখলাম তাতে আমাদের পিলে চমকে গেলো। রাকিবের উরুর পাশে এক
খাবলা মাংস নেই। ভাই মিথ্যা বলছি না। কেউ যেন গর্ত করে কেটে নিয়েছে এক মুঠো
মাংস। এক নাগাড়ে রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। রাকিব গাছ থেকে নেমে একবার উপরে
তাকিয়ে বাড়ির দিকে দৌড় মারল। আমাদের মধ্যে কয়েকজন ভয় পেয়ে নিজেদের বাড়ির
দিকে ছুটে গেলো। আমি এবং আরও ২-৩জন রাকিবের পিছন পিছন ওদের বাসায় গেলাম।
রাকিব ততখনে দরজা থেকে ঢুকে পড়ছে। তার চিৎকার শুনে আঙ্কেল অ্যান্টি বেড়িয়ে
এলো ভিতর থেকে। তার এই অবস্থা দেখে সবাই ভয়ে এবং কষ্টে চিৎকার করে উঠলো।
রাকিব ঘরে ঢুকেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো। দ্রুত আঙ্কেল তাকে নিয়ে ছুটলেন আল
রাজি হাসপাতালে। সেখানে নেয়ার পর কিছু করা গেলো না। ২০ মিনিট পর রাকিব মারা
যায় হাসপাতালেই।
পরিশেষঃ রাকিবের মৃত্যুর পর পুরো এলাকার মানুষ
জমে যায় তাদের বাড়িতে। অ্যান্টি একনাগাড়ে বিলাপ করে কান্না করছিলেন। আমি
জীবনের প্রথম চোখের সামনে মৃত্যু ঘটা দেখলাম। রাকিবকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে
আসা হয় বাসায়। লাশটা যখন গোছল করানো হয় তখন সবাই বলছিল তার শরীর নাকি খুব
দ্রুত ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছিলো এবং কেমন যেন শক্ত হয়ে যাচ্ছিলো। দ্রুত জানাজা
শেষে তাকে আজিমপুরেই কবর দিয়ে দেয়া হয় সব মুরুব্বীদের পরামর্শে। রাকিবের
লাশ জানাজার পর আর দেখানো হয় নি। যদিও নিয়ম থাকে যে জানাজার পর মানুষ লাশ
দেখতে পায়।
আমার ছেলেবেলা এরচেয়ে ভয়ংকর কাটানোর কথা কখনো চিন্তাও করি
নি। প্রিয় একটি বন্ধুকে হারালাম। তাও এমনভাবে যা স্বপ্নেও আসে নি। সেই বেল
গাছটা কেটে ফেলা হয়। গাছটি কাটার পর নাকি প্রায় রাতেই আঙ্কেলদের টিনের রাতে
কেউ একনাগাড়ে কিছু একটা দিয়ে বাড়ি দিতো। ধাতব কিছু একটা। প্রচণ্ড আওয়াজ
হলেও কেউ সাহস করে বের হতো না। আর ঘুমের মধ্যে অ্যান্টি প্রায়ই দেখতেন একটা
বিদঘুটে মানব দেহ তার দিকে এগিয়ে আসছে। আঙ্কেলরা বেশিদিন থাকেন নি সেই
বাড়িতে। বাড়িটা ছেড়ে চলে যান কয়েকমাস পর। আমার বাবাও বদলি হয়ে যান। আমরাও
চলে যাই নতুন ঠিকানায়।
আমি জানি না রাকিবের মৃত্যুর কারণ কি ছিল। ছোট
ছিলাম তাই কারো সাথে এ নিয়ে আলোচনা করতে পারি নি। বড় হয়ে এখনো ভাবি সে কথা।
এখনো মনে আছে রাকিবকে।
আল্লাহ রাকিবকে সব সময় ভালো রাখুক। অনেক ভালো। তোমাকে ভুলবো না রাকিব।
উত্তরমুছুনবাংলায় ভালো ভালো হাঁসির গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় ভূতের গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় প্রেমের গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন