পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১২

পাহাড়ে (১)
উৎসর্গ > নষ্ট কাক আর এস কে নাসির
আমার লেখালেখির তেমন অভ্যাস নেই। টুকটাক এদিক ওদিক লিখেছি, তবে চটি লেখার অভিজ্ঞতা শুন্যই বলা যায়। দেখা যাক কতটুকু পারি। তখন প্রথম দেশের বাইরে এসেছি। মাস্টার্স করতে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছি। তেমন ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় না, এডমিশন সহজ বলে ঢুকে যেতে পেরেছি বলা যায়। প্রচুর বাঙালী ছেলেমেয়েরা একই কারনে এখানে ভর্তি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী ছাত্রও অত্যাধিক। যাহোক, বিদেশ বিভুঁয়ে দেশী লোকজন পেয়ে ভালোই লাগছিলো। ডর্মে উঠলাম আমি।


ডর্মে খরচ বেশী বলা যায়। যারা আগে থেকে ব্যবস্থা করতে পেরেছে তারা নিজেরা মিলে বাসা ভাড়া করে থাকে। আমার সে সুযোগ না থাকায় ডর্মেই উঠতে হলো। খুবই ছোট রুম, শেয়ার্ড বাথরুম করিডোরের অন্যান্য ছেলেদের সাথে। তবে হাইস্পিড ইন্টারনেট কানেকশন থাকায় অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন বোধ করলাম না।
ক্লাশ শুরু হয়ে গেলো কয়েকদিন পরে। তিনজন বাঙালি পেয়ে গেলাম প্রথম দিনই। জাফর, আসিফ আর তানিয়া। তিনজনই প্রাইভেট ইউনিতে ছিলো দেশে। আমি নিজে অবশ্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। দেশী লোকজন পেয়ে বেশ ভালো লাগলো। ওরা বয়সে আমার চেয়ে একটু ছোটও হতে পারে। এই ভার্সিটিটা এমন যে সাদা পোলাপানের চেয়ে কালা বা হলুদ চামড়ার লোকজনই এখানে বেশী। জাফর আর আসিফ আগে থেকে নিজেদের মধ্যে পরিচিত, এরা সবাই বেশ মালদার পার্টি। আমি দিন দুয়েক ওদের সাথে ঘুরে বুঝলাম, আমার পক্ষে ওদের সাথে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব না। আমি কোনোমতে এক সেমিস্টারের টাকা নিয়ে এসেছি, যত দ্রুত সম্ভব ইনকামের রাস্তা খোঁজা দরকার। আড্ডা নাইটক্লাব এসব আমার পোষাবে না। তানিয়া এসেছে নর্থ সাউথ থেকে, ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্রী ছিলো। চেহারা মোটামুটি, ভালো না আবার খারাপও বলা যায় না। আবহমান বাঙালী নারী অথবা তরুনী। কথায় কথায় একদিন জানতে পারলাম ওর বাবা কাস্টমসের সরকারী চাকুরীজীবি। সরকারী চাকরী করে মেয়েকে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়িয়েছে আবার খরচ করে দেশের বাইরেও পড়াচ্ছে, ঘুষখোর না হয়েই যায় না। জাফর আর আসিফের পার্টিবাজ স্বভাবের কারনে তানিয়ার সাথে ওদের একটু দুরত্ব তৈরী হয়ে গেলো প্রথম দুমাসেই। হোমওয়ার্ক আর প্রজেক্ট নিয়ে তানিয়া প্রায়ই ফোন করা শুরু করলো আমাকে। টার্ম ফাইনালের আগে তানিয়া যোগাযোগ আরো বাড়িয়ে দিলো,যদিও আমি আর তানিয়া ভিন্ন প্রজেক্ট গ্রুপে ছিলাম। আমি এতে বেশী কিছু মনে করলাম না। দেশেও মেয়েদের একই কান্ড দেখে অভ্যস্ত। প্রয়োজনের সময় ঢাকাই মেয়েরা সাধারনত যতজন সম্ভব ততজন ছেলেবন্ধু রাখে। তবে বিদেশের একাকীত্বে তানিয়ার ফোন কল বিরক্তিকর হলেও একদম খারাপ লাগতো না। এন্টারটেইনমেন্ট বলতে পর্ন সাইট দেখে হাতমারা ছাড়া আর কিছু ছিলো না। এখানে পর্ন ডাউনলোড সহজ হওয়াতে প্রচুর পর্ন দেখা পড়ে যেত। মাঝে মাঝে একরাতে ৩/৪ বার হাত মেরেছি এমনও হয়েছে।
মার্চের শুরুতেই টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে গেলো, প্রজেক্ট সাবমিশন শেষ করে বাসা খুজতে বের হয়ে গেলাম। এত খরচ করে ডর্মে থাকা সম্ভব না। অবধারিতভাবে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তানিয়ার ফোন একদম বন্ধই হয়ে গেলো। ধন্যবাদ জানানোর প্রয়োজনও বোধ করলো না। শালা ঘুষখোরের মেয়ে, যেমন বাপ তেমনই মেয়ের চরিত্র। আমি মেয়েদের এধরনের আচরনের সাথে পরিচিত তাই গায়ে মাখলাম না। আর তানিয়ার দিকে কোনো সেক্সুয়াল এট্রাকশনও বোধ করি নাই। তানিয়ার যে দিকটা ভালো ছিলো, সে বেশ ইন্টেলজেন্ট। ঘন্টার পর ঘন্টা কনভার্সেশন চালানোর মত। যাহোক, পিজার দোকানে পার্ট টাইম চাকরী নিলাম। কোরিয়ান এক ছেলের সাথে রুমমেট হয়ে ডর্ম ছেড়ে বাসায় উঠলাম। স্প্রিং সেশনের ক্লাশের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, সারাদিন দোকানে কাজ করে বেশ টায়ার্ড লাগতো। তবু যতদুর পারা যায় টাকা জমিয়ে নিচ্ছিলাম।ক্লাশ শুরু হওয়ার আগের উইকেন্ডে তানিয়া কল দিলো। তানিয়ার কল আশা করতেছিলাম তবে ক্লাশ শুরু হওয়ার পরে। তানিয়া বললো আমি হাইকিংয়ে যেতে চাই কি না,মোস্তফা ভাইদের সাথে। মোস্তফা ভাই এই শহরেই থাকে,কিসে যেন চাকরী করে। ওনার সাথে এক দেশী আড্ডায়
এর আগে পরিচয় হয়েছিলো। আমি বললাম, সকালে কাজ আছে, দুপুরের পর যেতে পারবো। কিন্তু ওরা সকালেই যাবে। তানিয়া খুব জোরাজুরি
করলো, ঠিক বুঝলাম না। এক সকাল কাজ নষ্ট করে যেতে মন চাইছিলো না। মোস্তফা ভাই নিজে বলায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজী হয়ে গেলাম।

পাহাড়ে (২)
মোস্তফা ভাইয়ের পুরানো গাড়ী। উনি আর ওনার বৌ সামনের সীটে বসা ছিলেন। আমি পিছনের সীটে তানিয়ার পাশে গিয়ে বসলাম। ওনারা বেশ ফুর্তিবাজ লোক। বললো,এত কি ব্যস্ততা আমার। আমি বললাম, টাকা পয়সার সমস্যায় যেন না পড়ি তাই বন্ধে কাজ করে জমিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। তানিয়া বললো, হ্যা আকরাম খুব ভালো ছেলে। শুধু পড়া আর কাজ। এই টার্মে ও না থাকলে ফেলই করে যেতাম। তানিয়ার প্রশংসা শুনে বেশ আশ্চর্য হলাম। আমার অভিজ্ঞতায় এর আগে সুবিধা নিয়ে যাওয়ার পর কোনো মেয়েকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে দেখি নি। এনিওয়ে শহর থেকে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার দুরে একটা পাহাড়ের ধারে এলাম। প্রচুর গাড়ী পার্ক করা। মোস্তফা ভাই বললেন, এখানে শত শত লোক হাইকিংয়ে আসে। সামারে আরো বেশী ভিড় থাকে। সবচেয়ে উঁচু চুড়া প্রায় এক কিলোমিটার উঁচু। একটানা হাঁটলে ঘন্টা তিনেক লাগে উঠতে। আমার পাহাড়ে ওঠার তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই। বন্ধু বান্ধবের সাথে সিলেটে ঘুরেছি তবে সেরকম উঁচু কোথাও উঠিনি।
গল্পে গল্পে হাইকিং ট্রেইল ধরে হাঁটতে লাগলাম। ইট আর নুড়ি পাথরের ট্রেইল। অনেক লোকজন উঠছে নামছে। অনভ্যাসের কারনে মিনিট পাঁচেকেই হাঁটু ধরে এল, কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারলাম না। প্রায় আধাঘন্টা হাঁটার পর বিশ্রামের জন্য সবাই থামলাম। মোটামুটি ঠান্ডায়ও ভেতরে আমি ভালোই ঘেমে গিয়েছি। ভাবী বললেন উনি আর উঠবেন না, টায়ার্ড। আমি শুনে খুশীই হলাম। কিন্তু মোস্তফা ভাই নাছোড়বান্দা, উঠতেই হবে। শেষমেশ রফা হলো, ভাবী আর তানিয়া এখানে থেকে যাবে আর বাকিরা উঠবে। কি আর করা, নিরুপায় হয়ে উঠতে হলো। কথায় কথায় মোস্তফা ভাই বললেন, তানিয়া ডর্ম ছেড়ে ওনাদের বাসায় উঠেছে। ওনার বাসার বেজমেন্টের একটা রুম তানিয়া ভাড়া নিয়ে থাকবে। আমার কাছে জানতে চাইলেন আমি কোথায় থাকি। বললাম, সাবলেটে আছি এক কোরিয়ান ছেলের বাসায়। উনি বললেন আমার সমস্যা না থাকলে ওনার বাসায় আরেকটা রুম আছে সেটা ভাড়া দিতে পারবেন। আমি কিছু বললাম না। ওনার বাসায় যেতে আপত্তি নেই, তবে ভাড়া না জেনে কিছু বলা উচিত হবে না।
ভীষন টায়ার্ড হয়ে নেমে আসলাম আমরা। চুড়া পর্যন্ত যাওয়া হয় নি। ভাবী রাতের খাওয়ার দাওয়াত দিলেন। ব্যাচেলর মানুষ কারো দাওয়াত ফেলে দেয়ার মত অবস্থায় নেই। চলে আসলাম ওনাদের বাসায়। গাড়ীর মত বাড়ীটাও পুরোনো। তবে গুছিয়ে রাখা। আড্ডা বেশ জমে গেলো, নানা রকম গল্প, ঢাকা শহরের নাইটক্লাব থেকে শুরু করে আজকালকার দিনের প্রেম, পরকীয়া ইত্যাদি। মোস্তফা ভাই ভাবী বেশ জমিয়ে রাখতে পারেন। এখানে এসে এই প্রথম মন খুলে গল্প করার সুযোগ হলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো। মোস্তফা ভাই বললেন এখানেই থেকে যাও, সকালে বাস ধরে চলে যেও। একটু গাইগুই করে সেটাও রাজী হয়ে গেলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে বুঝলাম বেশীক্ষন থাকা উচিত হবে না। আতিথেয়তার অপব্যবহার করলে পরে আর দাওয়াত নাও পেতে পারি। দুইতিন দিন পর তানিয়াকে কল দিলাম। কথায় কথায় বললাম, মোস্তফা ভাই ওনার বাসার একটা রুম আমাকে ভাড়া দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এ ব্যাপারে তানিয়ার মতামত কি? তানিয়া শুনে বেশ খুশি হলো বলেই মনে হয়, অন্তত ফোনে যতটুকু অনুমান করা যায়। তবে ভাড়া বুঝলাম ৫০ ডলার বেশী। ৫০ ডলার অনেক টাকা আমার জন্য। আরো তিনচার দিন সময় নিলাম ভাবার জন্য। এক ফ্যামেলীর সাথে থাকতে গেলে অসুবিধাও আছে।

পাহাড়ে (৩)
নানা আগুপিছু ভেবে মোস্তাফা ভাইয়ের বেজমেন্টে উঠে গেলাম। নতুন সেমিস্টার শুরু হয়ে গেলো ইতিমধ্যে। তানিয়া আর আমি একসাথে যাওয়া আসা করি প্রায়ই। ক্লাশ, বাস আর বাসা মিলিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৬/৭ ঘন্টা তানিয়া আমার সাথেই থাকতো। একদিন ক্লাশ শেষে বাসায় এসে একা রান্না করছি এমন সময় তানিয়া নীচে বেজমেন্টে আমার ঘরে আসলো কি একটা কাজে। চিংড়ি আর পেয়াঁজ ভেজে খাওয়ার ব্যবস্থা করছিলাম, তানিয়া বললো, ডালটাও রান্না করতে পারো না? সারা বছর শুধু ভাজা পোড়া খাও।
আমি বললাম, ক্লাশ করে আর কাজ করে ভাই এত পোষায় না।
তানিয়া রেঁধে দেবার অফার দিলো, আমি না করলাম না। ব্যচেলর মানুষ খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে না করা ভুলে গেছি। তানিয়া বললো, পেয়াঁজ আর রসুন কাটো, ছোটো টুকরা করে। কথামত আমি কাটাকুটা শুরু করলাম। তানিয়া ঘরোয়া জামাকাপড় পড়ে এসেছে, সালোয়ার কামিজের মধ্য দিয়ে ওর সেক্সি শরীরটা ফেটে বেরিয়ে আসছিলো। আমার ধোনটা পুরাপুরি খাড়া না হলেও একটু বড় হয়ে ছিলো। কিচেনের চাপা জায়গায় আমরা দুজনেই এদিক ওদিক যাওয়া আসা করছিলাম। হঠাৎ ধোনটা ওর পাছায় লেগে গেলো, সম্পুর্ন অনিচ্ছাকৃতভাবে। তানিয়া আচমকা বলে উঠল, ওমা ওটা কি। আমি তাড়াতাড়ি বললাম, সরি, আমি ইচ্ছা করে করিনি। ও বললো, হা হা, না ঠিক আছে, এবারের মত মাফ করে দিলাম। সেদিন অনেক হাসি ঠাট্টা হলো খেতে খেতে।
এর কয়েকদিন পরে দাঁড়িয়ে বাসে যাচ্ছি, তানিয়া আমার সামনে ছিলো। আমি ইচ্ছা করে বললাম, তানিয়া তুমি পেছনে গিয়ে দাঁড়াও, নাহলে আবার কম্প্লেইন করে বসবা। তানিয়া বললো, বল কি? ওটা কি আবার আসছে নাকি? এই নিয়ে আরেক দফা হাসাহাসি হলো। বাসে আর কেউ বাংলা বুঝে না অনুমান করে দুজনে বেশ কিছুক্ষন ১৮+ আলাপ করে নিলাম। খুব বেশীদিন লাগলো না দুজনের মধ্যে আলোচনার লজ্জা ভেঙে যেতে। সপ্তাহ দুয়েক পরে তানিয়া আর আমি মোটামুটি খোলাখুলি ভাবেই ধোন, দুধ এগুলা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতাম। ক্লাশে কোন মেয়ের দুধ বড়, কে কাকে চুদে এসব নিয়ে আড্ডা দেয়ার নেশা পেয়ে বসলো। তবে তখনও একজন আরেকজনকে স্পর্শ করা শুরু হয় না।
মিডটার্ম পরীক্ষা দিয়ে ঠিক করলাম সিনেমা দেখতে যাবো। মোস্তফা ভাইকে বললাম ভার্সিটিতে কাজ আছে ফিরতে দেরী হবে। তানিয়া আর আমি পাশাপাশি বসে সিনেমা দেখলাম। হল থেকে বের হওয়ার সময় ভীড় ঠেলে যখন বেরিয়ে আসছি অন্ধকারে আমি পেছন থেকে তানিয়াকে জড়িয়ে ধরলাম। তানিয়া বাধা তো দিলই না, উল্টো আমার সাথে লেপ্টে রয়ে আস্তে আস্তে হাঁটতে থাকলো। আমার ধোনটা তখন শক্ত হয়ে কাঁপছে, পারলে জিন্স ফুটো করে বের হয়ে আসে এমন অবস্থা। বাসায় এসে আর শান্ত থাকতে পারলাম না, কম্পিউটারে পর্ণ ছেড়ে মাল ফেলে নিলাম। মনে হচ্ছে অতি শীঘ্র চোদাচুদি না করতে পারলে একটা অঘটন হয়ে যাবে।
এটা ছিলো স্প্রিং টার্ম। এই টার্মের পর সামার শুরু। টার্ম ফাইনালের ডেট পড়ে গেলো। বাংলাদেশের তুলনায় এখানে পড়াশোনার চাপ বেশী। তবে সুবিধা যে ফাইনাল পরীক্ষার চেয়ে ক্লাশ টেস্ট, প্রজেক্ট এগুলোতে নম্বর বেশী থাকে। ফাইনালের আগের উইকেন্ডে ঠিক করলাম, একদিন হাইকিংয়ে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে আসবো। সবদিক দিয়ে ভালো ধকল গেলো। তানিয়াকে বলার পর সেও যেতে চাইলো। বাসায় আর মোস্তফা ভাইদেরকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলাম না। শনিবার বাস ধরে দুজনে পাহাড়ে চলে এলাম। খুব বেশী দুরে না। ঠান্ডা কেটে গেছে। অনেক গুলো হাইক আছে, মোটামুটি সহজ একটা ট্রেইল নিলাম আমরা। ছোটবেলার প্রেমের অভিজ্ঞতার গল্প করতে করতে হাঁটতে লাগলাম। আগেরবার যখন এসেছিলাম খুব পরিশ্রান্ত লাগছিলো। এবার তানিয়ার সাথে গল্পের আনন্দে কি না জানি না, ঘন্টাখানেক কোথা দিয়ে কেটে গেলো টেরই পেলাম না। আমরা যে ট্রেইলটা নিয়েছি এটায় উচ্চতা বাড়ে খুব আস্তে আস্তে, কিন্তু লম্বায় বেশী। এজন্য সম্ভবত লোকজনের আনাগোনা কম। এতে অবশ্য আমি খুশীই হচ্ছিলাম।
ঘন্টাখানেক হেঁটে রেস্ট নেয়ার জন্য একটা গাছের গোড়ায় বসলাম আমরা। আমার আবার ভীষন মুতে ধরছে। কিন্তু এখানে আশে পাশে কোন টয়লেট দেখছি না। বাংলাদেশ হলে রাস্তার পাশেই বসে যেতাম, জরিমানার ভয়ে সেটা করতে ইতস্তত হচ্ছিলো। আবার তানিয়াও আছে। শেষমেশ তানিয়াকে বললাম তুমি বসো আমি একটু পানি ছেড়ে আসি। তানিয়া বললো, এ্যা, এখানে পি করা অবৈধ, যে কেউ দেখে ফেলবে। আমি বললাম, আমি একটু জংগলের ভেতরে গিয়ে করবো অসুবিধা নেই। আমি অনুমতির অপেক্ষা না করেই ট্রেইল থেকে বের হয়ে গাছের ভীড়ে ঢুকে গেলাম। মোটামুটি ১০০ গজ যাওয়ার পরে মনে হলো এখানে কেউ দেখবে না। আমার ব্লাডার ফেটে বার্স্ট হওয়ার মত অবস্থা। প্যান্টের চেইন খুলে ধোন হারামজাদাকে বের করে মনের সুখে ছাড়তে লাগলাম।
“তোমাদের কত সুবিধা, চেইন খুলে বের করলেই হয়ে যায়।”, তানিয়ার গলার শব্দ শুনে থতমত খেয়ে গেলাম। তানিয়া তাকিয়ে দেখছে, সে আমাকে ফলো করে এখানে চলে এসেছে। তাড়াতাড়ি উল্টো ঘুরে আমি বললাম, আরে এ কি। এ আবার কি রকম অসভ্যতা। তানিয়া বললো, তোমাদের পুরুষ মানুষের আবার লজ্জা আছে নাকি? আমি মোতা শেষ করে ধোনটা ঝাঁকিয়ে প্যান্টে ভরে নিলাম। তানিয়া সেটা দেখে বললো, তুমিও এই ঝাঁকুনি দাও? আমি বললাম অসুবিধা কি? তবে তুমি কাজটা ভালো করো নাই, আমার ইজ্জতটা গেলো। তানিয়া বললো, আমার ছাড়তে হবে, এখন তুমি ওদিকে যাও। আমি বললাম, হা হা, আমি দেখবো। তুমি আমার শ্লীলতাহানি করছো, আমি এত সহজে ছেড়ে দেব না।
তানিয়া বেশী কথা না বলে প্যান্ট নামিয়ে আমার দিকে পাছা দিয়ে মুততে বসে গেলো। ওর ফর্সা পাছাটা দেখে আমি মারাত্মক উত্তেজিত হয়ে গেলাম। বেশ কয়েকবছর পর মেয়েদের পাছা দেখছি। তানিয়া ওদিকে ছড়ছড় করে মুতে যাচ্ছে। এ মুহুর্তে ও একটু ডিফেন্সলেস অবস্থায়। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরবো কি না বুঝতেছি না। কিন্তু ও যদি চিৎকার দেয়। বেশী চিন্তা করতে পারলাম না। তানিয়া মোতা শেষ করে উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছে তখন পেছন থেকে চেপে ধরলাম। তানিয়া প্যান্ট আটকানোর সুযোগও পেল না। আমি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দুধে হাত দিলাম। ব্রা পরে আছে, দুধগুলো ঠিক ধরা যাচ্ছে না। তানিয়া বললো,কি করতে চাও? আমি বললাম, জানি না, মন অনেক কিছু করতে চায়, কষ্ট করে বাধা দিয়ে রেখেছি। তানিয়া বললো,বাধা না দিলে কি হবে? আমি বললাম, হয়তো খারাপ কিছু হবে। তানিয়া বললো, তাহলে সেটাই হোক, এই বলে আমার দিকে মুখ ঘুরালো। আমি সাথে সাথে ওর গালে ঠোঁটে চুমু দিলাম। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রন কিছুটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো। তানিয়ার কথায় সম্বিত ফিরে পেলাম। সে বললো, আরেকটু ভেতরের দিয়ে যাই, নাহলে কেউ হয়তো দেখে ফেলবে। গাছের গুঁড়ি আর লতাপাতা পার হয়ে আরেকটু ভেতরে গেলাম, আশা করি ট্রেইল থেকে দেখা যাবে না।
তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে আবার চুমু দেয়া শুরু করলাম। কতক্ষন ধরে কিস করলাম মনে নেই। তবে অনেক্ষন, সাধ মিটছিলো না। আমি বললাম, তোমার দুধে মুখ দেয়া যাবে। তানিয়া বললো, যাবে। আমি ওর টি শার্টটা খুলে ফেললাম। তারপর ব্রাটাও খুলে ফেললাম। ফর্সা বুকে চমৎকার দুটো দুদু। বড়ও না ছোটও না। আমি দেরী না করে একটা দুধে মুখ দিয়ে আরেকটা হাত দিয়ে টিপতে থাকলাম। হয়রান হয়ে গেলে দুধ বদল করে নিলাম। দুধগুলো টিপে গলিয়ে ফেলতে মন চাচ্ছিলো। আমি বললাম, প্যান্ট খোলা যাবে?তানিয়া বললো, ইচ্ছা হলে খোলো। আমি তানিয়ার জিন্সটা টেনে নামিয়ে নিলাম, প্যান্টিটাও খুলে দিলাম। তানিয়া বললো, কি ব্যাপার? তুমি নিজে তো কিছু খুলছো না। আমি বললাম, তুমি চাও আমি খুলি? তানিয়া বললো, খুলবা না মানে? আমাকে ল্যাংটা করে তুমি কেন জামা কাপড় পড়ে থাকবা? আমিও শার্ট প্যান্ট জাংগিয়া খুলে ছুঁড়ে মারলাম। এখন গহীন অরন্যে আমরা দুই নরনারী, আদম হাওয়ার মত, নগ্ন, ল্যাংটা। চমতকার ফিলিংস হচ্ছিলো। তানিয়াকে দলামোচড়া করলাম কিছুক্ষন। পাছাটা কামড়ে কামড়ে লাল করে দিলাম। কি যে করবো নিজেই তালগোল পাকিয়ে ফেললাম। তানিয়া বললো, আমার পুশিটা খাও। আমি বললাম, পুশি না ভোদা? তানিয়ার ভোদাটা মারাত্মক। সুন্দর করে লম্বা রেখার মত বাল ছাটা। ভোদাটা বেশীও চওড়াও না আবার ছোটও না। আমি ভোদাটায় মুখ লাগিয়ে দিলাম,তানিয়া দাঁড়িয়ে ছিলো। অল্প অল্প মুতের গন্ধ। তবে আমলে না নিয়ে জিভ ঢুকিয়ে দিলাম। আমি বললাম একটা পা উঁচু করো, নাহলে খাওয়া যাচ্ছে না। নোনতা স্বাদের ভোদাটা খাচ্ছিলাম আর তানিয়া শীৎকার দিয়ে উঠছিলো। তানিয়া বলে উঠলো, ফাক মি, আমাকে চুদো, এখনই চুদো। আমি আর দেরী না করে জংগলের মাটিতেই তানিয়াকে শুইয়ে দিলাম। আর না চুদে থাকা সম্ভব না। ধোনটা ঢুকিয়ে এক হাত দুধে আরেক হাত গাছে হেলান দিয়ে ঠাপ মারতে লাগলাম। ভাগ্যিস আগেরদিন হাত মেরে রেখেছিলাম, না হলে এতক্ষনে মাল বের হয়ে যেত। তানিয়া বলতে লাগলো,ফাক মি হার্ডার। চোখ বুজে দাঁত কামড়ে মজা খাচ্ছিলো। এবার আমি নিজে শুয়ে তানিয়াকে বললাম উপরে উঠতে,নীচ থেকে ঠাপাতে লাগলাম। এক পর্যায়ে মনে হলো আমার মাল বের হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি ধোনটা বের করে এনে তানিয়ার পাছায় মাল ফেলে দিলাম। মাল ফেলে মাথা ঠান্ডা হলো। তানিয়া বললো, আসো কিছুক্ষন শুয়ে থাকি। তানিয়া আমার বুকে পড়ে রইলো। মাটিতে শুয়ে থাকতে অস্বস্তি লাগছিলো, পোকামাকড়ে কামড় দেয় কি না, ভয়ও লাগছিলো। তানিয়াকে বললাম, চলো যাই, মাটিতে জোঁক থাকতে পারে। তানিয়া জোঁক শুনে লাফ দিয়ে উঠলো। দুইজন দুজনের গায়ে ভালোমত দেখে নিলাম জোঁকপোকে কামড়েছে কি না।

জংগলে চোদাচুদি (৪) – চীনা মেয়ের ভোদা
ঐ ঘটনার পর তানিয়ার সাথে আমার ঘনিষ্টতা ভীষণ বেড়ে গেলো। দুইজন একসাথে ছাড়া কোনো কাজই করি না। ক্লাশের ফাঁকে দুধ চিপাচিপি, আমি দুধ টিপি তানিয়া আমার ধোন চেপে দেয়। কিন্তু ফুল চোদাচোদি করার মত জায়গার অভাব। মাথা গরম অবস্থাতেই টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা দিলাম। প্রতিদিন অন্তত একবার মাল না ফেললে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া অসম্ভব হয়ে গেছিলো। দিনে রাতে মাথার মধ্যে শুধু তানিয়ার ভোদা আর দুধ দেখতেছিলাম। ভালয় ভালয় পরীক্ষার দুই সপ্তাহ গেলো। স্বাভাবিক ভাবেই মেয়েরা একটু চাপা ভাব নিয়া থাকে। তানিয়া চুদাচুদি করতে চাইতেছিলো হয়তো। কিন্তু সে মুখে ভাব রাখলো যেন কিছুই হয় নাই। বাসায় সেক্স করার কোনো উপায় নাই, মোস্তাফা ভাবী সারাদিন বাসায় থাকে। তানিয়ারে বললাম হাইকিংয়ে যাইবা কি না। তানিয়া একটু ভাব নিয়া তারপর রাজি হইলো। আগের মতই বাসে করে পাহাড়ে গিয়ে হাজির। গতবারের চাইতে মনে হয় দশগুন বেশী লোক আর বাচ্চা কাচ্চা। এত লোকের ভীড়ে চোদা সমস্যা। সারাদিন প্রচুর হাঁটাহাঁটি করলাম, মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে গেলো। বিকালে তানিয়া আর আমি পাহাড়ের ভেতরের ঢালে একটা লেকের পাড়ে বসে সাথে আনা স্যান্ডউইচগুলো খাওয়া শুরু করলাম। এখানেও লোকজন। একদম ভীড় না হলেও কয়েক মিনিট পরপর লোকজন ট্রেইল দিয়ে হেঁটে যায়।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে একটা গাছের গুঁড়িতে বসে আড্ডা দিতেছিলাম। বিষয় স্কুল কলেজে প্রচলিত ডার্টি জোকস। ছোটবেলায় জেনে রাখা আমার কিছু ছড়া শুনে তানিয়া হেসে কুটি কুটি। একটা ছিলো-
টানাটানি করো না,
ছিড়ে গেলে পাবে না
লুংগি খুলে দেখো না
ঝুলছে একটা ব্যানানা
হঠাৎ বেশ ভালো মুডে চলে এলাম আমরা। আরেকটা ছড়া আমি দাবী করলাম রবীন্দ্রনাথের লেখাঃ
আমার নুনু ছোট্ট নুনু
দাদার নুনু মস্ত
দিদির নুনু চ্যাপ্টা নুনু
মাঝখানেতে গর্ত।
তানিয়া খুব বিরোধিতা করলো, এরকম বাজে ছড়া রবীন্দ্রনাথের হতেই পারে না। ওর কাছ থেকে মেয়ে মহলে প্রচলিত কয়েকটা জোকস শুনলাম। বেশীরভাগই ছেলেরা ছোটবেলা থেকেই জানে। এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে তখন। পার্কে সন্ধ্যার পরে থাকার নিয়ম নাই। আমরা উঠি উঠি করছি, লোকজন কমে যাওয়ায় আমি একটু সুযোগ নিচ্ছিলাম। তানিয়াকে জড়িয়ে ধরলাম। মুখে একটা চুয়িংগাম পুরে তানিয়া গাঢ় চুমু দিলাম। তানিয়াও বেশ রেসপন্সিভ তখন। নুনুর ছড়া তানিয়ার মুড ভালো করে দিয়েছে। একহাত দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তানিয়ার দুধে হাত দিচ্ছি এমন সময় খসখস শব্দ পেলাম। কারা যেন হেঁটে আসছে ট্রেইল ধরে। আধো আধো অন্ধকারে আমরা ফ্রীজ হয়ে রইলাম। আমার এক হাত তখন তানিয়ার দুধে আরেক হাত তানিয়ার জিন্সের প্যান্টে যাবে যাবে অবস্থায়। ছোট ছোট কথা বলতে বলতে একটা চীনা মেয়ে আর চীনা ছেলে ছোট পথ ধরে লেকের দিকে আসছিলো। ছেলেটা কিছু একটা বলে আর মেয়েটা হেসে উঠছিলো। ওরা গাছের আড়ালে আমাদেরকে খেয়াল করলো না, আমাদের পার হয়ে একদম লেকের ধারে গিয়ে দাঁড়াল। আমরা তখনও স্তব্ধ হয়ে বসে আছি, ওদের চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। পরিস্থিতি এমন আমরা নাড়াচাড়া করলে ওরা পেছনে তাকিয়ে দেখতে পাবে। পোলাপান দুইটা এর মধ্যে পানিতে ঢিল ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু করছে। সন্ধ্যার পর এখানে থাকা নিষেধ, তাও হারামজাদারা যাচ্ছে না।
কিছুক্ষন পরে ওরা একজন আরেকজনকে জড়িয়ে চুমাচুমি শুরু করল। জিব খাওয়া খাওয়ি শেষ হতে দশ মিনিট লাগলো। ঐ দৃশ্য দেখে আমি তানিয়ার ঘাড়ে আলতো করে চুমু দিতে লাগলাম। একসময় মাথাটা ঘুড়িয়ে আমিও তানিয়ার ঠোঁটটা ভালমত চুষে নিলাম। এর মধ্যে দুই চীনা দেখি কাপড় খোলা শুরু করছে। মেয়েটার চমৎকার ফিগার। ছোট ছোট দুটো দুধ, বুদবুদের মত একটা ফর্সা পাছা। আমাদের এংগেল থেকে মেয়েটার সামনের দিকটা ভালো দেখা যাচ্ছিল না। চাঁদের অল্প আলোয় লোমশ ভোদাটা অল্প অল্প দেখতে পেলাম। চিনা মেয়েদের একটা সমস্যা এরা ভোদার বাল কাটে না। পোলাটা দুধ হাত দিয়ে টেপাটেপি করল, কিন্তু মুখ দিলো না। এই দৃশ্য দেখে আমরা তখন বেশ উত্তেজিত। মেয়েটার গায়ে এদিক সেদিক কামড়া কামড়ি চললো। মেয়েটা তখন মাটিতে বসে ছেলেটার ধোন মুখে পুরে ফেললো। পোলাটার দুই পাছা চেপে ধরে বেশ ভালো ব্লোজব দিচ্ছিল। ঠিক এরকম সময় ঘটল বিপত্তি। আমি একটু নড়েচড়ে বসতে গিয়ে শুকনা ডালে পা দিয়ে ফেললাম। মট করে শব্দে ওরা দুজনই থেমে গেলো। অন্ধকারের জন্য সরাসরি আমাদের দেখতে পাচ্ছে না কিন্তু কয়েক গজ সামনে আসলেই দেখতে পাবে। ব্যাপারটা খুব খারাপ হয়ে যাবে তাহলে। ভাববে আমরা লুকিয়ে চোদাচুদি দেখতেছি। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে বেশী সময় নেই। আমি এক ঝটকায় তানিয়াকে টেনে উঠালাম। তাড়াতাড়ি ট্রেইলে উঠে লেকের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। চীনা দুইটা তখনো ল্যাংটা, তবে ব্লোজব বাদ দিয়ে ওরা দেখার চেষ্টা করছে কে আসতেছে। এমনিতে তখন অলমোস্ট রাত, চাঁদের আলো আছে, কিন্তু যথেষ্ট না। আমরা কাছাকাছি হতে আমি বললাম, হেই গাইস। মেয়েটা উঠে দাঁড়ালো কিন্তু ওদের কাউকেই ভীষন লজ্জিত মনে হলো না।
সম্ভবত মানুষের সামনে ল্যাংটা হয়ে অভ্যাস আছে। আমাকে পোলাটা বললো, হেই বাডি, টেকিং এ নাইট হাইকিং? আমি বললাম, উমম, আহ নট সো মাচ, জাস্ট ট্রায়িং টু ফাইন্ড আ কোয়ায়েট প্লেস। অওফুলি ক্রাউডেড টুডে। [বাংলায়] নিজেদের জন্য একটু একলা জায়গা খুঁজতেছিলাম।
পোলাটা বললো, ইউ আর রাইট ম্যান, পুরা সামারেই কোয়ায়েট প্লেস পাওয়া যায় না। এজন্য আমরা সন্ধ্যায় আসি।
- কিন্তু সন্ধ্যায় থাকা তো বেআইনী।
- আরে না। নাইট পাস কিনলে রাতে থাকায় কোনো সমস্যা নাই। আমি আর আমার বেবী এই লেকটা খুব পছন্দ করি। এটার ভালোবাসায় একদম আদিম অনুভুতি হয়। একটু পরে চাঁদ আরো উঠবে।
- রিয়েলী? হুম। তোমার কথা হয়তো ঠিক। ন্যাচারাল সেটিংসে ভালোবাসার সুযোগ এখন পাওয়া কঠিন। দেখি আমাদের জন্য একটা জায়গা খুঁজে পাই কি না।
- তোমরা চাইলে এখানে বসতে পার, আমাদের সমস্যা নেই। আমরা শখের ন্যুডিস্ট, ন্যাচারাল থাকতে সমস্যা নেই।
- আমি তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম, থ্যাংকস ম্যান। ওদের থেকে সামান্য দুরে একটা গাছের গুঁড়িতে আমরাও বসে পড়লাম।
নানা রকম আলাপ শুরু হলো। ওরা দুজনেই তাইওয়ান থেকে এসেছে স্কুলে থাকতে। বাংলাদেশের নাম ভালোমত শুনে নাই। ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট বুঝিয়ে বললাম। পোলাটার নাম ডং আর মেয়েটা লিউ। কথা বলতে বলতে লিউ বললো, তোমরা দুজনে কেন জামা কাপড় খুলছো না। তোমাদেরকে একটু দেখি। আমি কখনও ন্যুড ইন্ডিয়ান গাই দেখিনি। শুনে ডংও বলে উঠলো গুড আইডিয়া। আই হ্যাভ নেভার সিন এ নেইকেড ইন্ডিয়ান গার্ল ইদার। শুনে একটু ইতস্ততে পড়ে গেলাম। তানিয়াকে বাংলায় বললাম, তুমি কি বলো। তানিয়া বললো, তোমার ইচ্ছা। আমি একটু ভেবে দেখলাম কি আছে দুনিয়ায়। আমার ধোন আর দুইজন মানুষ দেখলে এমন কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে না। বললাম,ওকে উই ক্যান ডু ইট। লিউ বললো, ওয়েইট ওয়েইট, নট সো ফাস্ট। আই ওয়ান্ট ইট টু বি ভেরী সেনসুয়াল।
- সেনসুয়াল, সেটা আবার কিভাবে?
- আস্তে আস্তে খোলো। আমি তোমার একটা করে কাপড় খুলবো আর ডং তোমার গার্লের একটা করে খুলবে।
তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম, ওকে?
তানিয়া মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, দ্যাটস সাউন্ডস ফান।
লিউ কাছে এসে প্রথমে আমার শার্ট খুলে নিল। চমৎকার একটা গন্ধ আসছিলো লিউয়ের কাছ থেকে। একটা সম্পুর্ন ল্যাংটা চীনা মেয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতেই ধোনটা জাংগিয়া ফুঁড়ে বেরোতে চাইলো। লিউয়ের দেখাদেখি ডং তানিয়ার টি-শার্টটা খুলে নিলো। সাদা ব্রা এর ভিতর তানিয়ার বড় বড় দুধ দুটো বোঝা যাচ্ছিলো। চাঁদের আলোয় তানিয়াকেও ভীষণ সেক্সি দেখাচ্ছে। লিউ বললো,এবার তোমার জুতা আর মোজা। আমি তাড়াতাড়ি বললাম,তোমাকে খুলে দিতে হবে না, আমিই খুলে নিচ্ছি। আমার জুতায় যে গন্ধ, তাতে মুড নষ্ট হয়ে যেতে পারে লিউয়ের। আমি নিজেই জুতামুজা খুলে একটু দুরে রেখে আসলাম। ততক্ষনে ডং তানিয়ার প্যান্ট খোলা শুরু করেছে। লিউ আমার প্যান্ট ধরে হ্যাঁচকা টান দিলো। পুরানা ঢাকাই জিন্সটা বাকিটুকু আমি নিজেই খুলে নিলাম।
এখন স্রেফ জাংগিয়া ছাড়া আমার পরনে কিছু নেই। ধোনটা তখন ইয়া মোটা হয়ে আছে। আমি লজ্জাই পাওয়া শুরু করলাম। লিউ চিতকার দিয়ে বললো, লুক গাইস, হিজ ম্যানহুড ইজ ডায়িং ফর সেক্স। তানিয়াও প্যান্টি আর ব্রা পরে দাঁড়িয়ে আমার দুরবস্থা দেখে হাসছে। ডং আমাকে বললো, তোমার বান্ধবীর ব্রা খুলবো, তোমার অনুমতি চাই। আমি বললাম, আরে অনুমতি তো দেয়াই আছে। ডং তানিয়ার পেছনে গিয়ে আস্তে করে হুকটা খুলে দিলো। তানিয়ার ভরাট দুধ দুটো খলাত করে সামনে আসলো। লিউ একটু ঈর্ষা মাখানো গলায় বললো, উম ওয়ান্ডারফুল বুবস। ডং আমাকে বললো, ইউ আর এ লাকি গাই। হালকা খয়েরী বোঁটা সহ তানিয়ার পুরুষ্টু দুধ দুটো আমার মাথা গরম করে দিচ্ছিলো। আমি আড় চোখে লিউয়ের দুধের সাথে তুলনা করে মেপে নিলাম। এখন আমি যেরকম উত্তেজিত, তাতে তানিয়া হোক আর লিউ হোক, যেটা পাবো সেটাই খাবো। লিউ বললো, ওকে টাইম টু সি হোয়াট ইজ হিডেন হিয়ার। এই বলে সে আমার জাইংগাটা টেনে নামিয়ে দিল। আমার ধোনটা তড়াক করে বের হয়ে আসলো। লিউ বললো, কুল। ডং আমার দিকে একবার তাকিয়ে তানিয়ার প্যান্টিটা নামিয়ে নিলো। তানিয়া আজ আবার শেভ করে এসেছে, একটা বালও নেই। সম্ভবত আমার সাথে সেক্স হতে পারে সেটা অনুমান করে ও পরিষ্কার হয়ে এসেছিলো।
ডং বললো, এখন আমরা চারজনেই নগ্ন, দেখলে তো এর মধ্যে কোন লজ্জা নেই। গড আমাদেরকে এভাবে বানিয়েছেন। মানুষের শরীর হচ্ছে সেক্সিয়েস্ট থিং। আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। চারজন লেকের ধারে ল্যাংটা হয়ে সভ্যতা নিয়ে নানা দার্শনিক আলোচনায় মেতে উঠলাম।
ডং এবং লিউ দুজনেই মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ছে,আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েই। বেশ নলেজেবল ওরা। দেশ, ধর্ম,গান, পপ কালচার নিয়ে চাঁদের আলোয় গহীন অরন্যে আমাদের আড্ডা জমে উঠলো। চাঁদ তখন অনেকখানি উপরে উঠে এসেছে। লেকের পানি রুপালী হয়ে ঝিকমিক করছিলো। এর মধ্যে চারজন মানব মানবী নগ্ন হয়ে জটলা করছে, প্রায় অপার্থিব পরিস্থিতি। এসব ঘটনায় কখন যে আমার ধোন ছোট হয়ে গেছে মনে নেই। লিউ হঠাৎ বলে উঠলো, ওর নুনুটা কচ্ছপের মত মাথা গুটিয়ে ফেলেছে। শুনে আমি একটু লজ্জা পেয়ে নড়েচড়ে বসলাম। ধোন শালা আসলেই বেশী ছোট হয়ে আছে। লিউ বললো, মে বি তানিয়া ক্যান হেল্প। তারপর তানিয়াকে বললো, তুমি কখনো ছেলেদেরকে মাস্টারবেট করিয়ে দিয়েছো? তানিয়া বললো,হোয়াট? আমি কেন ছেলেদেরকে মাস্টারবেট করাতে যাবো। শুনে লিউ বললো, দেন ইউ আর মিসিং দা বেস্ট পার্ট।
লেট মি শো ইউ হাউ টু ডু ইট।
লিউ তাদের ব্যাগ থেকে একটা তোয়ালে বের করে মাটিতে বিছিয়ে দিলো। আমাকে বললো শুয়ে নিতে। তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, লেট আজ
গিভ হিম দা বেস্ট প্লেজার অফ হিজ লাইফ। ডং ইউ শুড ওয়াচ। ডং বললো, নো প্রবলেম, লেট মি সি হোয়াট ইউ গাইস ডু। লিউ তানিয়ার
হাতটা আমার ধোনে লাগিয়ে দিলো, বললো, আস্তে আস্তে টেনে দিতে।

জংগলে চোদাচুদি (৫) – দুই মেয়েকে একসাথে

বাঙালী মেয়েদের সমস্যা হচ্ছে তাদের সেক্স সমন্ধে খুব কম ধারনা থাকে। যেগুলা থাকে তাও ভুল ধারনা। তানিয়ার অবস্থাও তাই। ছেলেরা তবু ইন্টারনেট, ব্লু ফিল্ম, চটি দেখে কিছু তথ্য আগেই পেয়ে যায়। মেয়েদের সমস্যা হলো বাসায় বাবা বড় ভাই অনেক সময় ছোট ভাইয়ের চাপে জামাইয়ের সাথে দেখা হওয়ার আগে সেক্স একটা ভীতিকর জিনিষই থেকে যায়। তানিয়াও সেরকম ছেলেদের মাস্টারবেশন সমন্ধে কোনো পজিটিভ ধারনা রাখে না। মাস্টারবেশনের মত প্রাকৃতিক আনন্দ নিয়ে ওর অনেক ট্যাবু ছিলো। লিউর চাপাচাপিতে ও আমার নুনুটা হাতের মধ্যে নিয়ে ধরল। লিউ দেখিয়ে দিলো কিভাবে হাত ওঠা নামা করতে হবে। ওদের ব্যাগ থেকে লিউ একটা জেল বের করে এনে আমার ধোনে ঘষে দিল। আরেকটা টিউব তানিয়াকে দিয়ে বললো এটা চরম মুহুর্তে ব্যাবহারের জন্য। তানিয়ার হাতের মধ্যে পড়ে আমার ধোনটা আবার জেগে উঠতে থাকলো,হৃৎপিন্ডের কাঁপুনির সাথে কেঁপে ওটা উঠে দাঁড়াচ্ছিল। লিউ খেয়াল করতেই তানিয়াকে বলল, হোল্ড ইওর হ্যান্ড, গেট ইট এওয়ে। তানিয়া নুনুটা ছেড়ে দেয়ার সাথে সাথে আমিও দেখলাম নুনুটা কেঁপে কেঁপে আস্তে আস্তে খাড়া হচ্ছে। লিউ তানিয়াকে বললো, আই লাভ দিস সাইট। হিজ ডিক ইস ওয়েকিং আপ।
লিউ তার ব্যাগ থেকে একটা তেল টাইপের তরল বের করে আমার বুকে মেখে দিতে শুরু করলো। তানিয়াকে বললো আমার দুপায়ের ওপর উঠে বসতে। তানিয়া তার থলথলে পাছাটা নিয়ে আমার উপরে বসলো। চাঁদের আলোয় আমি হালকা হালকা ওর ভোদাটা দেখতে পাচ্ছি। ভোদার গর্তটা ঈষৎ ফাঁকা হয়ে আছে। লিউ খেয়াল করে ফেললো সাথে সাথেই, টেক এ গুড লুক, নাউ ইউ হ্যাভ দা অপরচুনিটি। লিউ খুব ভালো ম্যাসাজ করতে পারে বলতে হবে। তার কোমল হাত দিয়ে আমার বুক গলা হাত আর মুখ এমনভাবে ঘষে দিচ্ছিল, আমার মনে হচ্ছিলো সময় যদি এখন থেমে যেত! মাথার চুল নেড়ে দিতে দিতে ওর দুধটা আমার মুখের সামনে এসে পড়ল। মনে হচ্ছিলো কামড়ে দেই, শুধু ডং এর কথা ভেবে মাফ করে দিলাম।
লিউ মাঝে মাঝে তানিয়াকে হাত মারার পদ্ধতি শুধরে দিচ্ছিলো। লিউ মনে হয় সমস্ত কায়দাকানুন জানে। আমি নিজেও জানতাম না, হাত মারার সময় বীচিগুলো চেপে ধরলে এত ভালো লাগে। লিউ নিজেও মাঝে মাঝে বীচিগুলো আদর করে দিলো। ধোন তখন লোহার মত শক্ত হয়ে আছে। তানিয়া ধোনের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত আস্তে আস্তে টেনে দিতে লাগলো। আমার মাল তখন নাড়ানাড়া শুরু হয়ে গেছে। লিউ আগেই বলে রেখেছে মাল বের হবার মত হলে আগে ওদেরকে জানাতে। লিউ নিজে ধোনের আগাটা আলতো করে মোচড় দিয়ে দিল কয়েকবার, মাল অলমোস্ট চলে আসতে চায় তখন। সারাজীবন এত হাজার বার মাল ফেলছি, এরকম কখনো অনুভব করি নাই। বেহেস্তি হুর নিশ্চই এভাবে চোদায়। লিউ একটা খারাপ কাজ করতে ছিলো, আমি মাল বের হতে পারে সিগনাল দিলেই ওরা কাজ থামিয়ে দেয়। অর্গাজম হবে হবে করেও আবার হয় না। এরকম বার পাঁচেক হবার পর লিউ বললো, ওকে উই ওন্ট গিভ ইউ এনি মোর পেইন। নেক্সট বারেই পৌঁছাতে পারবে। এই বলে ও আমার বুকে বসে পড়ল। ওর ভোদাটা আমার পুরষ দুধ দুটোর মধ্যে, চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। খুব ইচ্ছা করছে একবার চেটে দিতে। কিন্তু লিউ সে সুযোগ দিলো না। বাল সহ ভোদাটা আমার বুকে ঘষতে লাগল। শালা মনে হচ্ছিলো মরেই যাবো মনে হয়। ওদিকে তানিয়া এমনভাবে ধোন ঘষছে যে আমি উত্তেজিত বোধ করতেছি, জাস্ট মাল ফেলার মত হচ্ছে না। মধুর যন্ত্রনায় পড়লাম। লিউ এবার আমার মুখে কানে ম্যাসাজ করে দিতে লাগল। ভোদাটা তখনও আমার বুকে ঘষে যাচ্ছে। আমার বুকের চুল আর ওর ভোদার বালে তখন মাখামাখি।
একসময় লিউ উঠে গেল আমার বুক থেকে। তানিয়াকে বললো উঠে এসে আমার বুকে বসতে। তানিয়াকে সে উল্টো করে বসাল, আমি তানিয়ার পিঠ আর পাছা দেখতে পাচ্ছি। ওর ভোদার খোঁচা খোঁচা ধারাল বালগুলো আমার পেটে ছিদ্র করে দিচ্ছিল। এবার ওরা দুজন মিলে পড়ল আমার ধোন নিয়ে। লিউ বললো মাল বের হওয়ার মত অবস্থা হওয়ার সাথে সাথে তাকে জানাতে। তানিয়া বীচি আর ধোনের গোড়া কচলে দিয়ে যাচ্ছিলো আর লিউ নিয়ন্ত্রন নিলো আগা সহ মুন্ডুটার। আমি সিগনাল দিলাম মাল বের হয়ে যায় যায় অবস্থা। লিউ তাড়াতাড়ি ছোট একটা টিউব থেকে একটা পেস্ট টাইপের জিনিষ আমার ধোনের মাথায় ঘষে দিলো। মনে হলো ইলেকট্রিক শক খেলাম। আমি অলমোস্ট দেখতে পাচ্ছিলাম আমার মুখটা লাল হয়ে যাচ্ছে। ধোনটা চরম শক্ত হয়ে ফেটে যাবে মনে হয়। কেমিক্যালটা যাই হোক ধোনের মাথায় গরম হয়ে জ্বলছিলো। মনে হচ্ছিলো এখন হাতিও চুদতে পারবো। সারা শরীর পশুর মত গোংরাচ্ছে। এসময় চুড়ান্ত ফিলিংস হয়ে ধোন থেকে ছিটকে মাল বের হয়ে যেতে থাকলো। প্রচুর মাল বের হলো ঐদিন আমার। তানিয়া আর লিউর গা হাত মেখে গেলো আমার মালে। তানিয়া তো একরকম চিতকার দিয়ে উঠলো। ওহ, আমি এরকম কখনো দেখিনি।

চাইনা চোদা

Its another polak production

বৃহস্পতিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১২

সাঁপ

প্রতিদিনের ন্যায় বিকেল বেলা তমাল বাড়ীর উঠোনে বের হয়েছে । উঠোনের পাশেই কবরস্থান । যেমন তেমন কবরস্থান নয় এটি । অনেক পুরাতন । বেশিরভাগ কবরের পরিচয় জানেনা কেউ । যে জাম গাছটার নিচে প্রতিদিন বসত আজও সেই জায়গায় দাড়িয়ে আছে তমাল
। প্রকৃতির সবুজ ঘেরা অসম্ভব সুন্দর সৌন্দর্য উপভোগ করছে আরভাবছে. . . . . .
কি বিচিত্র আল্লাহর সৃষ্টি ! কত সুন্দর করে নিপুন হাতে গড়েছেন এই পৃথিবী । কোথাও কোন বিন্দু মাত্র ভুল নেই । সৃষ্টির কারুকার্য দেখে সেচ্ছায় সৃষ্টিকর্তার কাছে মাথা নত হয় তমালের । একমনে শুধু ভাবছে আর ভাবছে । কবরস্থানের দিকে তাকিয়ে মৃত্যুর কথা মনে পড়ে যায় । কি সম্বল আছে ওপারে যাওয়ার? আমার তো তেমন কোন পুণ্যই নেই । কিভাবে থাকবো ঐ অন্ধকার কবরে । যেখানে একদিন সবাইকেই যেতে হবে ।কি করেছি আমি এই ছোট্ট জীবনে ? যেদিকে তাকাই সেদিকেই শুধু পাপাচার আর অনাচার।কেউ কি ভয় করেনা নাকি যে তাদের একদিন মরতে হবে । যেতে হবে সেই অন্ধকার কবরে । নাহ্ আর ভাবতে পারছিনা । আল্লাহর ভয়ে কেমন জানি অন্যরকম লাগছে । কেনজানি হঠাত্‍ বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো । ঠিক সেই সময় কোথা থেকে যেন সুললিত কন্ঠে কোরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ শুনতে পায় তমাল । কান পেতে থাকে কোন দিক থেকে আওয়াজটা আসে । এমন সুমধুর সুরে কোরআন তেলাওয়াত ইতি পূর্বে কখনও শোনেনি । কে তাহলে এত সুন্দর করে তেলাওয়াতকরছে ?
এমন সময় চোখ পড়লো তার থেকে ৩-৪ হাত দূরেই একটি গোখরা সাঁপ ফনা তুলে তার দিকে চেয়ে আছে । আর ঐ তেলাওয়াতের সুরটাও সাঁপটার কাছ থেকে আসছে । সাঁপটি মাথা দুলাচ্ছে আর অসম্ভব সুন্দর করে তেলাওয়াত করছে । তমাল ভেবে পায়না এখন তার কি করা উচিত ? ভয়ে থরথর করেকাঁপতে লাগলো তমাল । দৌড় দিয়ে পালিয়ে যাওয়ারচিন্তা করে তমাল । কিন্তু তা আর হয়না যেন ।পাঁ টা যেন প্যারালাইজডহয়ে গেছে । কোন এক অদৃশ্য শক্তি যেন আটকে রেখেছে তাকে ।সাঁপটি অনবরত তেলাওয়াত করেই যাচ্ছে ।
কতক্ষন এভাবে কাটলো বুঝতে পারেনা তমাল ।ভয় অনেকটাই কেটে গেছে । ভয় পাওয়ার কি আছে? সাঁপটা তো আর তার কোন ক্ষতি করছেনা ।মনে মনে নিজেই নিজেকে সাহস দেয় তমাল । দেখিনা শেষ পর্যন্ত কি হয় । মনে হয় জ্বীন ভুত জাতিও কিছু একটা হবে এটা । শরীর থেকে টপটপ করে ঘাঁম পড়ছে যেন গোসল সেরে আসলো এখনি । কি আর করা , হাঁ করে সাঁপটার দিকে তাকিয়ে শুধু তেলাওয়াত শুনছে তমাল । তমালের মনে হলো সাঁপটা কোন একটা বড় সূরা ধরেছে এবং তা সম্পূর্নটা না শুনিয়ে ছাড়বে না ।না শুনতে চেয়ে তো আর লাভ নেই । আর তাছাড়া শুনতে তো ভালোই লাগছে ।
ছদাকল্লাহূল আযীম. .. .. ..
যেন জ্ঞান ফিরে পায় তমাল । এখন বোধহয় ছাড় পাবো । নাহ্ পাঁ তো উঠছেনা । আরো কি . .. . . . ?মুখ ফসকে কথাটা বের হয় তমালের । চেয়ে দেখে সাঁপটার দিকে । হঠাত্‍ .. .
সাঁপটা তার চেহারা বদলালো । পরিনত হলো একটি মৌমাছি তে ।সাইজটাও অন্য সব মৌমাছি থেকে অনেকটা বড় । আরে এতো দেখছি আমার দিকেই উড়ে আসছে । পালাই যদি কামড় মারে । তমালের পাঁ দুটো এবার কিন্তু ফ্রি হলো । এক দৌড়ে আঙিনায় এসে উপস্থিত । আর ঐ মৌমাছিটাও পিছন পিছন উড়ে আসে । এসে বসে আঙিনায় থাকা ঠিক লাউয়েরমাঁচার উপর । আর অদ্ভুদ সব ঘটনা ঘটে যেতে লাগলো তখন । নিমিষেই লাউ গাছে ফুল আসলো । পরাগায়ন ঘটলো, লাউয়ের জালি গুলো অতি দ্রূত বড়ও হওয়া শুরু করলো । একি ! অবাক কান্ড । ব্যপারটাতো মাকে জানানো লাগে, বলেই মা মা মা বলে ডাকতে থাকেতমাল । মা আসতে এত দেরি করছে কেন ? জোরে জোরে ডাতে লাগলো মা ও মা ও মা. . .. . . . .
মাথায় কারও যেন পরশ অনুভব করে তমাল ।চেয়ে দেখে তার মা । কিরে ঘুমের মধ্যে আমাকে ডাকছিস কেন ? কোন স্বপ্ন দেখেছিস?

সমাপ্ত

অদ্ভুত যুবক

তখন আমরা ময়মনসিংহের ত্রিশালে থাকি। আমি তখনখুব ছোট। যেইদিনের ঘটনাসেদিন আমার আম্মু রান্না ঘরে মাছ ভাঁজছিলেন। এমন সময় খাকি প্যান্ট আর গেঞ্জিপড়া এক যুবক আসলো আমাদের কোয়ার্টারের বারান্দায়। আব্বু বাসায় ছিলেন।
তিনি ভাবলেন হয়তো সাহায্য চাওয়ার জন্য এসেছে, কারন যুবকটি কোনো কথা বলছিল না। তখন আব্বু একটি ২ টাকার নোট বের করে ছেলেটিকে দিতে চাইলেন। কিন্তু সে তা নিলো না। তখন আব্বু আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “ছেলেটা তো টাকা নিচ্ছে না।” তখন আম্মু বললেন ৫ টাকা দেয়ার জন্য। তখন আব্বু ৫ টাকা বের করে বারান্দায় এলেন ছেলেটিকে দেয়ার জন্য। আম্মুও বেরিয়ে এলেন এই অদ্ভুত যুবকটিকে দেখার জন্য। কিন্তু এবারো সেই যুবক টাকা গ্রহন করলো না। বরং ইশারায় আব্বুকে বললেন টাকাটা তিনি যেনোআম্মুর হাতে দেন। আব্বুআম্মুর হাতে টাকাটা দিলেন। ছেলেটি এবার ইশারায় আম্মুকে বললেন তার টাকা ধরা হাতটি মুঠো করার জন্য। এই পর্যন্ত ছেলেটি একটি কথাও বলেনি। আম্মু কৌতূহল বশত হাতটি মুঠো করলেন। এবার সে দুই হাত মুঠো করে একটার পিছনে আরেকটি ঘসে দিল এবং আম্মুকে তাই করতে বলল। আম্মু মন্ত্রমুগ্ধের মত তাই করলেন। এবার ছেলেটি আম্মুকে ইশারা করলো যাতে আম্মু নিজের হাতের গন্ধ শুঁকেন। আম্মু হাত নাকের কাছে নিয়ে খুব আশ্চর্য হয়েগেলেন। উনার হাত দিয়ে আগর বাতির গন্ধ বের হচ্ছিল। কিন্তু তিনি একটু আগে যখন রান্না ঘর থেকে বের হন তখনো তার হাতে হলুদের গন্ধ ছিল। গন্ধ শোঁকার সাথে সাথে লোকটি চলে গেলো। আম্মু তাকে দাঁড়াতে বললেন। কিন্তু সে দাঁড়ালো না।আম্মু তড়িঘড়ি করে গেটের বাইরে গেলেন কিন্তু আসে পাশে কোথাও সেই লোকটিকে দেখতে পেলেন না। আমাদের কোয়ার্টারের সামনে বিশাল খোলা মাঠ ছিল। তাই কেউ যদি খুব দ্রুত হেঁটেও চলে যায় তবুও তাকে দেখা যাবে সে যত দূরেই থাকুক। এমন সময় এক রিকশাওয়ালা আম্মুর সামনে এসে থামল এবং তাকে ঐ লোকটির কথা জিজ্ঞেস করলো। আম্মু রিকশাওয়ালাকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন যে সে ঐ লোকটিকে চেনে কিনা। রিকশাওয়ালা জানালো যে লোকটি তার রিকশাতে করেইএসেছিলো। টাকা চাইতে, কিছু ময়লা কাগজ একত্রেকরে ফুঁ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। এরপর তাকে দাঁড়াতে বলে এইদিকে আসে। রিকশাওয়ালা তাই টাকার জন্য লোকটিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।
কে এই অদ্ভুত যুবকটি? আপনাদের কাছে কি এর কোনো উত্তর আছে? আমার কাছে লোকটি আজো এক রহস্য। আর আপনাদের কাছে?

সমাপ্ত

বিরাতের ডাক

সোরাব ভাই ? সোরাব ভাই ?
মতির ডাকে ঘুম ভাঙল সোহরাবের। অল্প ঘুমের মানুষ সে । এক ডাকেই জেগে উঠলো । কিন্তু বিছানা ছাড়ল না । শরীরটা আর আগের মত নেই ।
-সোরাব ভাই ? ও সোরাব ভাই ?
পুরোপুরি ঘুম ভেঙে গেছে সোহরাবের । জোয়ান বয়সের মতএখন আর লাফ দিয়ে উঠে বসতে পারে না । সময় লাগে । বয়সকালে ঘোড়ার মত তেজি ছিলসে । কাঠের চৌকিতে মট মট শব্দকরে উঠে বসে সোহরাব ।
-খাড়া মতি , আইতাছি ।
জগ থেকে এক গ্লাস পানি খায় সে । আজকে উত্তরের বিলে যাওয়ার কথা মতির সাথে । জাল বাছতে হবে । মানুষে কারেন্ট জাল পাতে ওদিকে । অনেক মাছ আটকা পরে । নিজেদের জালের মাছ ছাড়াও অন্যদেরও জাল বাছে ওরা । তাই এই ভোর রাতে যাওয়া । বারতি সাবধানতা । ভোরের আলো ফোটার আগে মাছগুলোতাজা তাজা হাটে নিতে হবে । তাজা মাছের দাম ভালো । সকাল বেলা ভালো দাম মেলে ।
কত বেলা হল ? ভাবে সোহরাব । চোখে এখনো ঘুম ঘুম । ফযরের বেলাতেও তার ঘুম পায় ? ভেবে অবাক হয় সে । হায়রে বয়স !
- সোরাব ভাই ? ও সোরাব ভাই ?
- আইতাছি কইলাম না ! খাড়া !
মতি থেমে যায় । নতুন বিয়ে করেছে সে । অল্প বয়স – উত্তেজনা বেশি । এক সময় এ দিন তারও ছিল । দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সোহরাব ।
হাতে একটা বেতের ঝুড়ি আর মাছ মারার আট ফলার ট্যাঁটা নিয়ে কবাট খুলে বেরিয়ে এল সোহরাব । বাইরে অন্ধকার । কিন্তু পথ চলা যায় । এইবার কিছু টাকা পয়সা জমিয়ে একটাটর্চ লাইট কিনতে হবে । না হয়কোনদিন আবার সাপখোপে কামড়িয়ে বসে !
- বউডা ভালো নি তর , মতি ?
আস্তে গলায় জানতে চায় সোহরাব ।
-হ ।
ফিসফিসিয়ে জবাব দিল মতি । পাছে কেউ শুনে ফেলে ! আশেপাশেঘর বাড়ি আছে । মাঝে মাঝে বাঁশঝাড় । এবড়ো থেবড়ো মাটির রাস্তা । উষ্টা খেল সোহরাব । খিস্তি করল সে । মতিহাঁটছে সাচ্ছন্দে । যেন উড়েউড়ে যাচ্ছে । হায়রে বয়সকাল ! ভাবে সোহরাব ।
হঠাৎই এক বাড়ির আড়াল থেকে বেরিয়ে এল একটি কালো ছায়া । চারপায়ে হাঁটছে । দাড়িয়ে পড়েছে মতি । সোহরাবের সামনে । দাড়িয়ে পড়েছে সোহরাবও । অন্ধকারে চোখ জ্বলছে সে কালো ছায়ার । ওরা এক চুলও নড়ছে না । নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে ।
আরও কিছুটা এগিয়ে আসে ছায়াটি । হাফ ছাড়ে সোহরাব । একটা কুকুর ! হাড় জিরজিরে । ওদের থেকে হাত দশেক দূরে দাড়িয়ে পড়লো কুকুরটি । ডাকছে না । শুধু মুখ দিয়ে ঘড়ঘড় শব্দ বের হচ্ছে । গায়ে রোম ওঠা শব্দ । হঠাৎই যেভাবে এসেছিলো , সে ভাবেই পিছিয়ে গেলো ।মিলিয়ে গেল বাড়ির ভিটার আড়ালে ।
ওরা হাটতে শুরু করল আবার । এবার আর কথা বলল না সোহরাব । বাড়তি সাবধানতা । কেউ চিনে ফেললে সমস্যা । কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করলে বিপদ ছিল । করল না কেন ? সোহরাব বুঝে উঠছে না ! ভাবল হয় রোগে ধরেছে , না হয় তার মতই বুড়িয়ে যাচ্ছে ।
হাটতে হাটতে গ্রামের শেষ মাথায় চলে এল ওরা । সামনে একটা খাল । তার উপরে ব্রিজ । মান্ধাতা আমলের লোহার ব্রিজ । কাঠের পাটাতন । ক্ষয়ে গেছে জায়গায় জায়গায় । ব্রিজের ওপারে একসারি তালগাছ । একটা পুরান ভিটাও আছে । কেউ থাকে না । তার মাঝ দিয়ে সরু মাটির রাস্তা । দু’ধারে আগাছা ঘাসে ভরা । বৃষ্টি হয়েছিল হয়ত । রাস্তা কাদা প্যাচপ্যাচে হয়ে আছে ।
এই রাস্তা নিয়ে গ্রামে অনেকগল্প আছে । অশুভ সব গল্প । এইখানে নাকি উনারা থাকেন । নাম নিতে হয় না । উনাদের পথেপরলে নাকি খারাপ কিছু হয় । এরকম অনেক হয়েছে । একবার একজনকে পেয়েছিল গ্রামবাসী । মরা । কিন্তু তার মাথা থেকেকোমর অবধি ছিল মাটির নিচে গাথা । শুধু পা দুইটা উপরে । আর একবার পেয়েছিল একজনের গাই গরু । শুধু চার পা মাটির উপরে । গা শিরশির করা গল্প এগুলো । কিন্তু গল্প । হাসে সোহরাব । কত এলো গেলো এই রাস্তায় ! আর সোহরাব এমন কাউকেই দেখে নাই যে নিজের চোখে ঘটনাগুলো দেখেছে । সবই শোনা গল্প ।
অনেকদূর এগিয়ে গেছে মতি । চিন্তা করতে করতে খেয়ালই করে নি সে ।
- ঐ । খাড়া – আস্তে হাট ব্যাটা !
মতি দাড়ায় না । তালগাছ গুলর মাঝ দিয়ে সরসর করে হাটতে থাকে । দৌড়াচ্ছে যেন । সোহরাব ভড়কে যায় । মতির পায়ের দিকে তাকায় সে । গোল বাঁশের মত সে পা । কোন আঙ্গুলনেই ! পায়ের পাতা বলে কিছু নেই ! সোহরাব গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠে – খাড়া কইছি – ট্যাঁটা মারুম কইলাম !
দাড়িয়ে পরল মতি । ধীরে ধীরে ঘুরে দাড়ায় সে । শরীর কেপে উঠলো সোহরাবের । জ্ঞান হারাল না সে । বড় সাহসী মানুষ । ছুড়ে মারল হাতের ট্যাঁটা । এ আর যাই হোক – মতি নয় । বাতাস খান খান করে হেসে উঠলো মতি!

- সোরাব ভাই ? সোরাব ভাই ?
পুবের আকাশে আলো ।
- সোরাব ভাই ? ও সোরাব ভাই ?
- তোমার ভাই না একটু আগেই বাইরে গেলো তোমার লগে !
- কন কি ? আমি তো আইলাম মাত্রই ।
দরজা খুলে বেরিয়ে এল সোহরাবের স্ত্রী । মোমেনা । চোখে মুখে প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে আছে মতির দিকে ।

সোহরাব কে পাওয়া গিয়েছিল ।পুরাতন লোহার ব্রিজের সেই খানে । তালগাছগুলোর কাছে । খালের পাড়ে । মরা । মাথা থেকে কোমর অবধি খালের পাড়ে কাদায় গাথা । শুধু পা দুইটা বেরিয়ে ছিল ।

-মতি ভাই ? মতি ভাই ?
মতির টিনের ঘর । শীতের দিন । গলা পর্যন্ত দুইটা মোটা কাথাআর লেপ টেনে শুয়ে আছে । চোখেঘুম নেই । গত কয়েক রাত ধরেই এমন হচ্ছে । পাশে তার ঘুমান দেড় বছরের ছেলে – আজিজুল , আর তার বউ । রাতে ঘুমাতে পারেনা মতি ।
-মতি ভাই ? মতি ভাই ?
মতির মাথার কাছ থেকে আধ হাত দূরে টিনের বেড়া । তার ঠিক ওপাশে দাড়িয়েই যেন ডাকছে তাঁকে । মাঘ মাসের শীতেও ঘেমে গেছে মতি । ঘাড় ঘুরিয়ে বউ – বাচ্চার দিকে তাকাল মতি । না , ওরা কিছু শুনতে পায় নি । পা টেনে লেপের নিচে গুটিয়ে আনে মতি । মুখ পর্যন্ত টেনে দেয় লেপ । আজিজুলকে জড়িয়ে ধরে সে । তার মাথার কাছের টিনের বেড়ায় খচখচ শব্দ । আবার ডেকে উঠে – মতি ভাই ? ও মতি ভাই ?
কয়েক রাত ধরে তিনবার ডেকেই চলে যায় সে । মতি সাড়া দেয়না । গলাটা সোহরাবের ।।

।। রাজসাক্ষী ।।

অতনুর পুরো নাম শিহাব শাহিন অতনু, ওর নানার রাখা নাম। ওদের বাড়ি উত্তর বঙ্গে, বর্ডারের কাছে। জায়গাটা ভয়াবহ রকমের দুর্গম। ইলেক্ট্রিসিটি তো দূরের কথা, একটা খাম্বাও নেই। যাতায়াতের মাধ্যম পায়ে হাঁটা পথ। প্রায় ১০মাইল হাঁটলে পাকা রাস্তা পাওয়া যায়। অতনুর এই অজপাড়াগাঁয়ে জন্ম হলেও ওর আধুনিক নামই বলে দেয় ওদের পরিবার গ্রামের আর ১০টা পরিবার থেকে আলাদা। ছোটবেলা বাবা মারা যাওয়ার পর নান
া বাড়িতেই বেড়ে ওঠে। ওর নানারা ওপারের লোক, যুদ্ধের পর এপারে চলে আসে। পরিবারের নামটাই যা ছিল, এছাড়া একেবারে নিঃস্ব হয়ে এপারে আসতে হয়। ও আবছা ভাবে জানে যে নানারা নাকি শুদ্ধ ব্রাহ্মণ ছিলেন, পরে ধর্মান্তরিত হয়েছেন।



ওর পরিবারে ৩টা আজব ঘটনা ঘটেছে। ওর বড় মামা, মেজ খালু আর মেজ নানা তিনজনই খুন হন। বর্ডার এলাকায় এসব স্বাভাবিক ঘটনা, তাই কোন থানা পুলিশ হয়নি। লাশ পাওয়ার পর ২-৪ দিন চোখের পানি ফেলে আবার কাজে মন দিয়েছে সবাই। এইসব ঘটনা যখন ঘটে তখন ওর বয়স ১১, আজ থেকে ১৭ বছর আগের কথা। তারপর ও বড় হয়ে এখন ঢাকায় থাকে। তিন দিন হল গ্রামে এসেছে শেষ যেটুকু ভিটামাটি ছিল তা বেঁচে দিতে।



শনিবার রাত। গ্রামে এখন এক ছোট মামা ছাড়া আর কেউ থাকে না। বিশ রুমের একটা টিনশেড দোতলা বাড়ি পুরো ফাঁকা পড়ে থাকে। ও উপরের ঘরটা নিলো। রাতে বেশ চাঁদ দেখতে দেখতে ঘুমানো যাবে। গ্রামে কতদিন রাত কাটানো হয়না।

রাত তিনটায় একটু টয়লেট পেলো ওর। এখানের একটা সমস্যা হচ্ছে টয়লেট করতে নিচে নামতে হয়। কি আর করা, নেমে টয়লেট সারলো। কলপাড়ে এসে হাত ধুতে যাবে, দেখল দুজন লোক বসে আছে নিচতলার বারান্দায়। কিছু নিয়ে তর্কাতর্কি হচ্ছে ওদের মধ্যে বোঝা গেল। খেয়াল করলো টর্চ আনতে ভুলে গেছে ও। কিন্তু এত রাতে এখানে বসে ঝগড়া করছে কারা? ভালমত তাকালো, দেখলো একটা লোক উঠে দাঁড়িয়েছে। তীব্র রেগে গেছে সে, আচমকা একটা ছুরি বের করে আমুল বসিয়ে দিল সে অপর লোকটার বুকে। পিচ করে একটা শব্দ হল। আঁতকে উঠল ও, খুন!! দ্রুত লুকানোর জায়গা খুঁজল ও, পেলোনা। ওদিকে লোকটা এদিকেই এগিয়ে আসছে। মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল ও। কিন্তু লোকটা ওর চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল, ওর দিকে তাকালও না। লোকটা একটু দূরে ডোবার ধারে গেলে চাঁদের আলো পড়লো লাশটার মুখে। চাঁদের আলোয় চিনতে কোন সমস্যা হলনা। বড় মামা!! লাশটা আর কারো না, বড় মামার!!



সারা গা ঝিমঝিম করে উঠল ওর। দ্রুত ছুটল বাম পাশের ঝোপের দিকে, ওখানে বড় মামার কবর আছে। গিয়ে যা দেখল তা এক কথায় অবিশ্বাস্য।



কবরটা খোঁড়া, চারিদিকে মাটি ছড়িয়ে আছে, একটা রক্ত মাখা ইট পড়ে আছে পাশে!!



গ্রামের লোকদের ডাকে জ্ঞান ফেরে অতনুর। কবরের পাশে পড়ে আছে ও। চারিদিকে অনেক লোকজন, এক এক জনের এক এক জিজ্ঞাসা। তার মাঝেই কবরের দিকে তাকাল ও, সব সুস্থ, স্বাভাবিক, শান্ত। কবরের মাটি দেখে সহজেই বোঝা যায় গত ১৭ বছরে কেউ তা খোঁড়েনি। তবে কি দুঃস্বপ্ন দেখছিল ও? তাই হবে হয়ত। ধীরে ধীরে লোকের কাঁধে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াল ও, তখুনি চোখ আটকাল একটা ইটের দিকে। গোল, একপাশে রক্ত মাখা। বুকটা ছাঁৎ করে উঠল ওর! ঠিক তখুনি, একটু গড়িয়ে পাশের ডোবাটায় পড়ে গেলো সেটা।



এই ঘটনার ২ ঘণ্টা পরেই বাসে করে ঢাকায় চলে আসে ও। কাউকে কিছু জানায় না। সবকিছু একটা দুঃস্বপ্ন বলে ভেবে নেয়।

দুই দিন পর। বাসায় কেউ নেই। একা ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিল ও, এমন সময় কারেন্ট চলে গেলো। মোম জ্বালাতে রান্নাঘরে যায় ও, আইপিএস টাও আবার নষ্ট।



ফিরে এসে দেখে ড্রয়িংরুম ভর্তি ৬-৭ জন লোক। সবার মুখে লাল কাপড় বাঁধা। একটা লোককে বেঁধে রেখেছে তারা। মোমের আলোয় চিনতে কষ্ট হয়না, ওটা মেজ খালু!!!



হটাৎ লোকগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে খালুর উপর। মুহূর্তে টুকরো টুকরো করে ফেলে ছুরি দিয়ে। শুধু ধড় আর মাথাটা রেখে বাকি হাত,পা আলাদা হয়ে যায়। এক ফোঁটা রক্ত ছিটে এসে লাগে ওর শার্টে। ওখানেই জ্ঞান হারায় ও।



জ্ঞান ফেরে পরদিন হসপিটালে। ঘরে ফেরার পর দেখে সব ঠিক আছে, তবে তার শার্টে রক্তের দাগ লাগলো কিভাবে, স্ত্রীর এই প্রশ্নের জবাব সে দিতে পারলনা।



চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখন একটা মানুষিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও। তীব্র কঠিন ওষুধ খেয়ে স্রেফ বেঁচে আছে। দুটি মৃত্যু ঘটনার রাজসাক্ষী হয়ে, তৃতীয় ঘটনাটি ঘটার অপেক্ষায়।


মুয়াজ্জিন

ঘটনাটা শুনেছি আমাদের মসজিদের মুয়াজ্জিন এর কাছ থেকে!তার নাম হানিফ!বয়স ৪০এর মত হবে! সে চাকুরি সূত্রে খুলনায় থাকতেন!তার বাড়ি বাগের হাট জেলার চিকলমারি থানার কালকিনী গ্রামে!প্রতি বৃহাস্পতিবার আছরের নামাজ শেষে গ্রামের বাড়িতেযান এবং শনিবার জোহরের নামাজ আমাদের মসজিদে পড়েন!মূল ঘটনাটা বলি | তার ভাষায় |দিনটা ছিল বৃহাস্পতিবার !আমি খুলনা থেকে রওনা দিলাম বিকাল ৬টায়! আমাদের সদর থানায় পৌছাতে পৌছাতে রাত ৯টা বেজে য
ায়! সদর থেকে আমার বাড়ি আরো ২০কিঃমিঃ পথ!কোন গাড়ি না পেয়ে একটা মটরসাইকেল ভাডা করি!মটরসাইকেলেকরে বাজার পর্যন্ত আসি!এর পরের রাস্তা ভাঙ্গা ও কাদা থাকায় গাডি আর জেতে পারবেনা বলে তাকে ছেড়ে দেই! বাজারে যখন পৌছাই সময় তখন রাত৯.৫০! বাজার থেকে আরো ৩কিঃমিঃদূরে আমার বাড়ি !বাজারের কোন দোকান খোলা নেই! আকাশ একটু মেঘলা থাকায় বেশ অন্ধকার লাগছে!আমার কাছে একটা ২বেটারির টর্চ !আমি হাটতে লাগলাম! যে রাস্তাদিয়ে আমি হাটছি তা ছিল মাটির রাস্তা!রাস্তার বামপাশেই ছিল খাল! ডানপাশে পাট হ্মেত! কিছু দুর হাটার পডে একটা পূজা মন্ডব! মন্ডবটার গেটের উপর একটা মহাদেবের মূর্তি২৫ফুট উচু হবে ও তার পাশে স্বশান! মহাদেবের মূর্তিটার গায়েশেওলা পরায় ঐ টাকে ভয়ংকর দেখাচ্ছিল! স্বশানটার দিকে যখন তাকালাম মনে হয় কেউ যেন একটা ওখান থেকে দৌরে আসবে আমাকে ধরতে! কিছুই দেখিনা কিন্তু মনে হচ্ছে কেউ বুঝি আমাকে দেখছে!আমাকে অনুসরন করছে!আমার পেছনে বুঝি কেউ আছে!দোয়া পড়তে থাকি মনে মনে !প্রথমে কিছু মনে থাকলে ও পরের গুলো ভুল হতে থাকে!কিছু দুর যাওয়ার পর পাশের খালে একটা নৌকা দেখে একটু সাহস পাই! নৌকায় লাইট মারি কিন্তু কোন শাড়াশব্দ নাই !আমি জিঙ্গাস করি কেউ কি আছ! তবু ও কোন শাড়া না পেয়ে আমি নৌকার কাছে যাই ! নৌকার পাটাতনের ভিতরে লাইট মারি!ভিতরে যাকে দেখলাম তাকে আমি চিনি!নাম গফুর!গফুরকে বললাম কিরে তুই এত রাতে এখানে কি করিস! গফুর বললো আমি না থাকলে আপনারে এতরাতে পার করাতো কে? এতরাতে কথাটা শুনে আমি ঘড়িটা দেখলাম!ঘড়িতে তখন সময় ১.৫৫!আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম! এত সময়তো হতে পারে না! আমি কি ৩ ঘন্টা ধরে হাটছি?মোটের পরে ৩০থেকে ৪০ মিনিটের রাস্তা!আমি গফুরকে কিছু বুঝতে দিলাম না!গফুরকে বললাম গফুর আমারে একটু পাড় করেদে!এই বলে আমি গফুরের নৌকায় উঠলাম!নৌকা পাড়ে ভেরার পর আমি গফুরকে বললাম গফুর আমারে একটু বাসা পর্যন্ত পৌছেদিবি? গফুর একটু ভেবে বললো ভয় পাইছেন?চলেন! আমরা দুজন একসাথে হাটছি!কিছু দুর আসার পর আমি খেয়াল করলাম গফুর আমার পেছন পেছন হাটে'!সামনে একটা কবরস্থান এবং কবরস্হান থেকে ধোয়া বের হচ্ছে!একটু যখন কাছে এসে লাইট মারলাম কবরের দিকে! দেখি একটি মেয়ে শাদাকাপড় পড়া চুলগুলো ছেডে দেওয়া কবরস্থানের ভিতরে দাডিয়ে আছে এবং হাত হিশারায় আমাদের ডাকছে! মেয়েটিকে দেখে আমি চিনেছি!ওর নাম ময়না! আমি গফুরকে বলি ও ময়না না? হটাত্‍ বুকের ভিতরটা কেমন যেন করে উঠলো!শরির কেপে গেল!আমার পাশে গফুর নেই!আমি একটা চিত্‍কার দিয়ে দৌরাতে দৌরাতে একটা বাড়ির সামনে গিয়ে অঙ্গান হয়ে পড়ি!বাড়ির লোকজন আমাকে তুলে নিয়ে মাথায় পানি দেয়! কিছুহ্মন পর আমার জ্ঞান ফিরলে আমি তাদের সবকিছু খুলে বলি !আমার কথা শুনে তারা একে অপরের দিকে এমন ভাবে মুখ চাওয়াচায়ি করে যেন আমি তাদের মিথ্থা বলছি ||পরে জানতে পারি গফুর ও ময়নার মধ্ধে একটা সম্পর্ক ছিল! গফুর মাঝির কাজ করে ও ময়নার বাবা একটু প্রভাবশালি !তাদের সম্পর্ক মেয়েটির পরিবার মেনে নেয়নি! তাই মেয়েটি সুইসাইড় করেছে ও গফুরের খোজ কেউ জানেনা|

লাইক দিয়ে নিয়মিত গল্প/ঘটনা পড়ুন ।

।।একটি যুক্তিহীন ঘটনা।।

গাড়ি থেকে যখন স্টেশনে নামি রাত তখন ঠিক ১টা। যাত্রিদের স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে রেল গাড়িটি আবার চলতে লাগলো। সঙ্গে থাকা ব্যাগটা কাঁদে ঝুলিয়ে স্টেশন মাস্টারের রুমের দিকে গেলাম। ভিতরে ঢুকতে দেখি সেখানে একজন লোক বসে আছে। বুঝতে পারলাম উনি স্টেশন মাস্টার। তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম এখান থেকে রসুলপুর কত দূর?
তিনি উত্তর দিলেন এখান থেকে রসুলপুর ৬ কি:মি রাস্তা। কিন্তু এত রা

তে এখান থেকে রসুলপুর যাওয়ার কোন ভ্যান পাওয়া যাবেনা। তাই রাতটা কষ্ট করে এখানে কাটাতে হবে। কথা শেষ করে তার রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। বাইরে এসে দেখি চারপাশটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা কোন মানুষ-জন নেই। পাশে যাত্রিদের ওয়েটিং রুম। সেখানে গিয়ে একটি চেয়ারে বসলাম। তারপরে চিন্তা করলাম কোন মতে আজ রাতটা এখানে কাটিয়ে কাল সকালের দিকে রসুলপুরের উদেশ্যে রওনা হব। দেয়ালে ঝুলে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত দেড়টা বাজে। চোখে একটু ঘুমের ভাব। তাই চোখ বুজে বসে রইলাম। হঠাৎ এমন সময় একজন লোকের আগমন। এসে জিগেস করে স্যার কৈই যাইবেন?
-রসুলপুর যাব। কিন্তু তুমি কে?
-আমার নাম মতি এই এলাকার ভ্যান চালক।
-ও তাই নাকি। আচ্ছা তুমি কি রসুলপুর যাবে?
-হ যামু স্যার চলেন।

মনে মনে চিন্তা করলাম কষ্ট করে স্টেশনে রাত
কাটার চেয়ে গন্তব্যে চলে যাওয়া ভাল।তাই ব্যাগটা হাতে নিয়ে মতিকে বলি চল।
কিন্তু ভ্যান গাড়ির সামনে এসে দেখি আগে থেকে একজন লোক তার উপর বসে আছে।লোকটার সমস্থ শরীল একটা চাদর দিয়ে ঢাকা। চেহারাটা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছেনা ।আমি কোন কথা না বলে তার পাশে গিয়ে বসলাম। তারপরে মতি ভ্যান চালাতে লাগলো। কিছু দূর আসার পরে আমরা গিয়ে একটি মাটির রাস্তায় উঠলাম। সেই রাস্তার দুপাশে ছিল বিস্ততৃ ধানক্ষেত। যত দূর চোখ যায় শুধু পাঁকা ধানের হাসি। মাঝে মাঝে রাস্তার দুই ধারে হালকা কিছু গাছ দেখা যাচ্ছে। আর খরা মৌসুমে চাষাবাদের জন্য একপাশে একটি খাল খনন করা হয়েছে। আকাশে আজ হালকা চাঁদের আলো তার পরেও চারপাশটা বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। আশেপাশে কোন জনবসতি নেই তাই চারদিকে শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছেনা।মাঝে মাঝে দূর থেকে একটি খেক শেয়ালের ডাক কানে ভেসে আসছে। কার্তিক মাসের শেষের দিকে তাই একটু শীত পড়ছে। উত্তরের হিমের হাওয়া মাঝে মাঝে শরীলে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। ব্যাগ থেকে তখন জেকেটটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিলাম।
একটু পরে মতি জিগেস করে "স্যার রসুলপুর আপনার কে আছ?
-রসুলপুর আমার এক বন্ধুর বাড়ি।
-ও আচ্ছা
মাঝে পথে আসার পরে হঠাত্ করে মতি বলে " স্যার আপনারা বসেন আমি একটু আসি।
বুঝতে পারলাম মতি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যাচ্ছে। তাই কোন কিছু বললাম না।
মতি পিছনের দিকে একটু দূরে গিয়ে রাস্তা থেকে নিচে নেমে যায়। তাকে আর দেখা যাচ্ছেনা। এদিকে অনেকক্ষন বসে থেকে আমার কোমরে ব্যথা হয়ে গেছে। তাই ভ্যান গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার মধ্যে একটু হাটাচলা করতে লাগি।একটুপরে খেয়াল করলাম অনেক সময় হয়ে গেছে কিন্তু মতি ফিরে আসছেনা। আমি তখন তার নাম ধরে ডাকতে লাগি কিন্তু কোন উত্তর আসলো না। আমার মাঝে কেমন একটা টেনশন কাজ করছে অথচ পাশে থাকা লোকটি কোন শব্দ করছেনা। শুধু চুপচাপ বসে আছে। আমি তখন ব্যাগ থেকে টর্চলাইটটি নিয়ে ঐ দিকে গেলাম। কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না। আস্তে আস্তে আরো সামনের দিকে গেলাম। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম খালের পাশে কার যেন লাশ পড়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখি এটি মতির লাশ। কে যেন তাকে গলাকেটে হত্যা করেছে। আর তার রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে খালের জলে মিশে যাচ্ছে।
ঠিক এমন সময় লক্ষ্য করলাম খালের ঐ পাশের ধান ক্ষেতের ভেতর থেক কিছু একটার শব্দ হচ্ছে। এক সময় সেই শব্দের তীব্রতা বাড়তে লাগলো। বুঝতে পারলাম ধান ক্ষেতের ভিতর দিয়ে কিছু একটা এদিকে আসছে। ভয়ে তখন দৌড় দিয়ে ভ্যান গাড়ির সামনে চলে আসি। কিন্তু এখানে এসে দেখি চাদর গায়ে দেয়া সে লোকটা নেই। আমি চারপাশ ভাল করে দেখলাম কিন্তু কোথাও লোকটিকে দেখতে পেলাম না। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম দূর থেকে কতগুলো কুকুর শব্দ করতে করতে এদিকে আসছে। কুকুর গুলোকে দেখে ভয়ে আমি দ্রুত ভ্যানের উপর উঠে গেলাম। কুকুর গুলো ভ্যান গাড়ির সামনে এসে কান্নার সুরে ডাকতে শুরু করে। মনে হচ্ছে কুকুর গুলো কিছু একটা দেখে ভয় পেয়েছে ।তাই ঐ দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। এমন সময় খেয়াল করলাম ঐ দিকে নিচের জমি থেকে কিছু একটা রাস্তার উপরে উঠেছে। হাতে থাকা টর্চলাইটটি তখন ঐ দিকে ধরলাম। দেখি রাস্তার উপর এক বৃদ্ধ মানুষ দাড়িয়ে আছে। মুখে আর পোষাকে রক্ত মাখা দাগ। চোখ যেন জ্বল জ্বল করছে আর এক দৃষ্টিতে এদিকে তাকিয়ে আছে। বৃদ্ধ লোকটিকে দেখে কুকুর গুলো ভয়ে সামনের দিকে দৌড় দিল। আমি তখন কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। চিন্তা করলাম ভাগ্যে যা থাকে থাকুক ব্যাগটা নিয়ে সামনের দিকে দৌড় দেব। তাই ব্যাগটি হাতে নিয়ে দিলাম একটা দৌড়। কিছু দূরে আসার পরে খেয়াল করলাম সামনে কেউ একজন হেটে যাচ্ছে। দ্রুত তার কাছে গেলাম। কাছে গিয়ে দেখি উনি আমার পাশে বসা সেই লোকটি। লোকটিকে দেখে মনে কিছুটা সাহস পেলাম। তাকে বলি ভাই আপনি হেটে চলে আসলেন? ঐ দিকে কে যেন মতিকে খুন করে পেলে গেছে।
লোকটি তখন বলে "কি কন ভাই!
এই প্রথম লোকটির গলার আওয়াজ আমি শুনতে পেলাম। কিন্তু আওয়াজটি কেমন যানি অতি পরিচিত মনে হচ্ছে। মনের মাঝে তাই একটু খটকা লাগলো।
লোকটিকে তখন বলি "ভাই অনেকক্ষন আমরা একসাথে আছি কিন্তু এখন পর্যন্ত আপনার চেহারাটা দেখিনি। আপনে মুখের চাদরটা একটু সরাবেন। আমার কথা শেষ হওয়ার পরে লোকটা তার মুখ থেকে চাদরটা সরালেন। চেহারা দেখে আমি হতবাগ হয়ে গেলাম। এতো দেখি মতি! কিন্তু মৃত মানুষ জিন্দা হল কিভাবে। ভয়ে তখন আমার মুখ থেকে আর কোন শব্দ বের হচ্ছিল না। এক সময় মনে হচ্ছে শরীলটা কেমন দূর্বল হয়ে আসছে আর আমি জ্ঞান হারাতে যাচ্ছি। তারপরে আর কিছু মনে নাই।

হুশ আসার পরে দেখি আমি বিছানায় শোয়া আর আমার বন্ধু ও তার পরিবার আমার চারপাশে বসে আছে। আর কেউ একজন আমার মাথায় পানি ঢালছে। একটু পরে সুস্থ হয়ে সব ঘটনা তাদের খুলে বলি। ঘটনা শুনে তারা সবাই অবাক কারন মতি ড্রাইভার একবছর আগেই মারা গেছে। আর কেন যেন তাকে ঐ রাস্তার পাশে খুন করে ফেলে গেছিলো।

সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১২

ভবানিপুরের জমিদার

এটি একটি সত্যি ঘটনা। আমার দাদার বাবা ছিলেন কলকাতার ভবানিপুরের জমিদার। কিন্তু হিন্দু-মুসলিম মারামারির সময় আমার এক চাচা চিকেন পক্সে মারা যান। তখন আমার দাদারা অনেক চেষ্টা করেও তাকে কবর দিতে পারছিলেন না কারণ তারা বলছিল এইটা হিন্দুস্থান তাই লাশ
পুরাতে হবে! আমার দাদী এইসব সহ্য করতে না পেরে সব জমিদারি ছেড়ে শুধু পার্ক স্ট্রিটের একটি তিন তলা বাসার সাতে বদল করে ঢাকার নওয়াবপুরে একটি বাড়ির ব্যবস্থা করেন।
প্লেন ভাড়া করে তার নিকট আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে ঢাকায় চলে আসলেন এবং এইখানে এসে আমার চাচার কবর দিলেন। কিন্তু নওয়াবপুরের সেই বাড়িটি ছিল একটা হিন্দু বাড়ি আর সেই বাড়ির পিছনে একটা কুয়া ছিল যার মধ্যে অনেক লাশ রাখা ছিল। দাদারা এসে এইসব পরিষ্কার করেন আর বাড়িভর্তি হিন্দুদের যেসব মূর্তি ছিল সেইসব মূর্তি সরিয়ে ফেলেন। কিন্তু ওই বাসায় যে সমস্যা ছিল তা কেউ বুঝতে পারে নি। প্রতিদিনই ঐখানে কিছু না কিছু ঘটত। যেমন রাতে এমনকি মাঝে মাঝে ভর দুপুরে লোহার বল দিয়ে কেউ খেলত। কেউ অসুস্থ হলে বাসার চারিদিকে খালি পচা-গলা মাংস দেখতে পেতো! কিন্তু সব চাইতে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা আজকে আমি সবার সাতে শেয়ার করতে যাচ্ছি।

একদিন সন্ধ্যা বেলা আমার বড় চাচা, আববু আর আমার দুই ফুপি পড়ছিলেন। দাদী তাদেরকে পড়তে দিয়ে তার ভাই এর বাসা যেটা ওই বিল্ডিঙেরই দোতালায় ছিল সেইখানে ঘুরতে গেলো। আর আববুদের বলল পড়ে শেষ করে রাখতে। দাদী চলে যাওয়ার একটু পড়েই আববুরা হঠাৎ দেখল দাদী দরজার কাছে হাঁটু গেড়ে বসে আছে আর আববুদের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত ভাবে হাসছে!! এইটা দেখে আমার বড় চাচা সহ সবাই খুব ভয় পেয়ে গেলো! আমার চাচা বার বার বলতে লাগলো "মা,তুমি এমন করছ কেন!আমরা কিন্তু খুব ভয় পাচ্ছি!! প্লিজ মা বলো তুমি এমন কেন করছ!" কিন্তু দাদু কোন কথার উত্তর না দিয়ে হাঁটুর উপর ভর করে আস্তে আস্তে আববুদের দিকে আগাতে লাগলো। আববুরা বার বার মানা করা সত্ত্বেও সে ভয়ঙ্কর একটা হাসি দিয়ে আববুদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো! একটা ভয় যেন সবার শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেলো। যখন জিনিসটা বিছানার একদম কাছে চলে আসলো তখন ভয়ে বাঁচার শেষ চেষ্টা হিসাবে তারা শেষবার একটা চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করলো এবং হঠাৎ তারা দেখতে পারল দরজায় দাদী দাঁড়িয়ে আছে আর বিছানার কাছে জিনিসটা আর নাই ! তখন আমার বড় চাচা দাদীকে জিজ্ঞাসা করলো যে, সে কেন এমন করে তাদের ভয় দেখাচ্ছিল? তখন সে বলল, "এমনিই..এইটা দেখার জন্য যে তোমরা ঠিক মত পড়ছ কি না।"

পরবর্তীতে আববুরা বড় হওয়ার পড়ে আমার দাদী শিকার করেছিল যে এইটা আসলে সে ছিল না কিন্তু আববুরা ছোট ছিল তাই সে তাদের ভয় দেখাতে চায় নি বলে তখন মিথ্যা বলেছিল...

পরবর্তীতেও অনেক ঘটনা ঘটে সেই বাড়িতে। যার কোনো উত্তর পাওয়া যায় নি কোনোদিন।

যুবতী

কটু বড় হলেও সবাই পড়ুন । কেউ মিস করবেন না ।

সূর্যটা প্রায় পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। সূর্যের অস্ত যাওযার এই দৃশ্যটা প্রতিদিন মুগ্ধ হয়ে দেখে লিন্ডা, আর দেখে সরাইখানার বাইরের উঠানে রাখা রানী তোমানের মূর্তিটাকে।
...
টেক্সাস শহরের অনেকটা বাইরে অবস্থিত ক্রিস আর লিন্ডার অনেক কষ্টে তৈরি করা সরাইখানা "লিন্ডা'স লজ"। লিন্ডার স্বামী ক্রিসের বয়স প্রায় ৭৫ এর কাছাকাছি আর লিন্ডার বয়স ৬৮। কোন ছেলেমেয়ে নেই ওদের। দীর
্ঘদিন ধরে এই সরাইখানা চালাচ্ছে ওরা স্বামী-স্ত্রী মিলে। সুখাদ্য আর অমায়িক ব্যাবহারের জন্য হাইওয়ের যাত্রীরা কিছুটা ঘুরে হলেও ওদের সরাইখানায় আসে, খেতে আর বিশ্রাম নিতে। বিয়ের পর থেকেই লিন্ডা বাইরের উঠানে রানী তোমানের মূর্তিটাকে দেখে আসছে। প্রায় ৭ ফুট উচু রানী তোমানের মূর্তি সগর্বে দাড়িয়ে আছে হাতে এক ভয়ঙ্কর দর্শন ছোরা নিয়ে। মাথায় ময়ুরের পালকের তৈরি মুকুট। কানে বেশ বড় ঝিনুকের তৈরি দুল। পায়ের কাছে জিভ বের করে দাড়িয়ে আছে ভয়ঙ্কর দর্শন এক জংলী কুকুর। যেন এক্ষুনি অদৃশ্য কোন শিকারের উপর ঝাপিয়ে পড়বে ওটা। বিয়ের পর প্রথম প্রথম মূর্তিটাকে দেখে বেশ ভয় পেত লিন্ডা কিন্তু এখন আর পায় না। ক্রিসের কাছে রানী তোমানের মূর্তিটার ইতিহাস শুনেছে লিন্ডা। ক্রিসের দাদার দাদা, রেমন্ড, অনেক আগে জঙ্গলে ঘেরা রেড ইন্ডিয়ানদের একটা গ্রামে গিয়েছিলেন শিকার করতে। সৌভাগ্যক্রমে রেড ইন্ডিয়ান সর্দারের একমাত্র মেয়েকে তিনি উদ্ধার করেন এক বন্য শুকরের কবল থেকে। কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সর্দার রেমন্ডকে রানী তোমানের এই মূর্তিটা উপহার হিসেবে দেয়। রানী তোমান রেড ইন্ডিয়ানদের অনেক পুরোনো এক দেবী। ইন্ডিয়ানদের বিশ্বাস, যুগে যুগে তাদের উপর যত বিপদ এসেছে তার মোকাবেলা করে তাদেরকে নিরাপত্তা দেয় রানী তোমান। তোমান কে তাই তারা ডাকে নিরাপত্তার দেবী বলে। রেড ইন্ডিয়ান সর্দার রেমন্ডকে একটা কথা বলে দিয়েছিল, “কখনও অসম্মান করোনা দেবীর, দেখো বিপদে ঠিক তিনি তোমার পাশে এসে দাড়াবেন।”

সেই থেকে আজ পর্যন্ত রেমন্ডের বংশধররা দেবী তোমানের মূর্তিটা সযত্নে সংরক্ষন করে আসছে। লিন্ডা জানে ব্যাপারটা কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু কিছু বলেনি ক্রিসকে। থাকনা, যে যার বিশ্বাস নিয়ে।

রাত প্রায় ১২ টা। এখন আর কাস্টোমার আসবেনা বললেই চলে। লিন্ডা রান্নাঘরের সিন্কে এঁটো বাসন মাজছে। ক্রিস ক্যাশের হিসাব নিকাশ নিয়ে ব্যাস্ত। হঠাৎ দরজা খুলে তিনজন মুখোশ পড়া লোক হুড়মুড় করে ভিতরে এসে ঢুকলো। একজন দৌড় দিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে পড়লো তারপর লিন্ডার মুখ চেপে ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসল। অন্য একজন ক্রিসের মাথা বরাবর একটা শটগান চেপে ধরল। তারপর ফিসফিস করে ক্রিসের কানে কানে বলল,"জলদি, ক্যাশে যা আছে চটপট বের করো, বেশী সময় নেই। না হলে বুড়িটার বুক ঝাঁঝরা করে ফেলবো"। ততক্ষনে লিন্ডাকে যে ধরেছিল তার হাতে বের হয়ে আসলো একটা ছোট পিস্তল। লিন্ডার মাথার উপর পিস্তলটা ধরে কুৎসিত দাঁত বের করে হাসতে লাগলো সে।

শটগানধারী তৃতীয়জনকে উদ্দেশ্য করে বলল, "পল, সামনে রাখা সিন্দুকটার তালা ভেঙ্গে ফেলো, তাড়াতাড়ি।"

ছটফট করে উঠলো ক্রিস। ঐ সিন্দুকে তাদের সারাজীবনের সঞ্চয় রাখা আছে। শটগানধারীকে অনুরোধ করলো, বারবার মিনতি করলো কিন্তু কোন কাজ হলো না। বরং শটগানের বাটের এক বাড়ি খেয়ে ক্যাশের উপর ছিটকে পড়লো সে।

সিন্দুকটা খোলার অনেক চেষ্টা করলো পল, কিন্তু পারলো না। শটগানধারীর দিকে ফিরে বলল, "জ্যাক, কাজ হচ্ছেনা, বুড়োটার কাছে আনলক কোড জিজ্ঞেস করো।"

জ্যাক ক্রিসের কলার চেপে টেনে তুলল।
"কোড বল, বুড়ো, নাহলে বুড়ি খতম"
ক্রিস কিছু বলল না শুধু নিজেকে ছাড়ানোর প্রানপন চেষ্টা করতে লাগলো।
জ্যাক ক্রিসের গালে জোরে একটা চড় মারল। আবার ছিটকে পড়ল ক্রিস। তারপর লিন্ডাকে যে ধরেছিল, তার উদ্দেশ্যে বলল, "কেভিন, বুড়িটার মাথায় ২ রাউন্ড গুলি ঢুকিয়ে দে।"
"নাহ", চিৎকার করে উঠল ক্রিস, "আমি বলছি। সিন্দুকের কোড হলো ২৩৯৭...."

শেষ করতে পারলো না ক্রিস, তার আগেই কোথা থেকে যেন এক বিশাল জংলী কুকুর এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো পলের গায়ের উপর। চিৎকার করারও সময় পেলনা পল, তার আগেই তার টুঁটি চেপে ধরল কুকুরটা। একটানে ছিড়ে ফেলল পলের কন্ঠনালী। মেঝেতে পড়ে কয়েক সেকেন্ড ছটফট করলো পল। তারপর একেবারে নিথর হয়ে পড়ে থাকলো।

চোখের সামনে এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠল জ্যাক। শটগানটা ক্রিসের মাথার উপর ধরলো আবার, কিন্তু গুলি করতে পারলো না। তার আগেই ক্যাশ টেবিলের উপর মুখ থুবড়ে পড়লো সে। ক্রিস অবাক হয়ে দেখলো, জ্যাকের গলা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। কেউ যেন অত্যন্ত নিপুন ভাবে, ধীরে সুস্থে জ্যাকের গলার একপাশ থেকে অন্যপাশে ধারালো একটা ছুরির ফলা বুলিয়ে দিয়েছে।

এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠলো লিন্ডা। দ্রুত ঘুরে দাড়ালো ক্রিস কিন্তু পিছনে কেউ নেই। তাহলে? কে হত্যা করলো শটগানধারীকে?

ততক্ষনে লিন্ডাকে ছেড়ে দিয়েছে কেভিন।

"কে?" চিৎকার করে উঠলো সে। ঘরের চারদিকে কয়েক রাউন্ড গুলি করলো। বোঝাই যাচ্ছে ভয় পেয়েছে। ঘনঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে, দরদর করে ঘামছে। পিস্তল ধরা হাতটা খুব জোরে কাঁপছে তার। আস্তে আস্তে পিছু হটতে লাগলো কেভিন। উদ্দেশ্য পরিস্কার, কোনভাবে দরজা পর্যন্ত যেতে পারলেই কোন একদিকে ছুট লাগাবে। হঠাৎ কেভিনের পিছে এসে দাড়ালো এক রেড ইন্ডিয়ান যুবতী। অবাক হয়ে তার দিকে তাকালো ক্রিস। খুব চেনা মনে হলো যুবতীর মুখখানা। কিন্তু কোনভাবেই মনে করতে পারলোনা মেয়েটা কে? হঠাৎ একটা ভয়ঙ্কর দর্শন ছুরি উঠে আসলো যুবতীর হাতে। বামহাত দিয়ে পেঁচিয়ে ধরলো কেভিনকে। মরন ভয়ে চিৎকার করে উঠলো কেভিন। ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলো। কিন্তু যুবতীর হাত যেন শক্ত পাথরে গড়া। একটুও নড়লনা তার হাত। ডানহাতে ধরা ছোরাটা কেভিনের গলার বামদিকে চেপে ধরল। তারপর খুব ধীরে বামদিক থেকে ডানদিকে ঘুরিয়ে আনলো ছোরাটা। ফিনকি দিয়ে টকটকে লাল রক্ত বের হয়ে আসলো কেভিনের গলা দিয়ে। চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল কেভিনের। আস্তে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো কেভিন। রক্তে ভেসে যেতে থাকলো সরাইখানার মেঝে।

বীভৎস এ দৃশ্য দেখে আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল লিন্ডা। ক্রিস যেন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। মেয়েটা ক্রিসের দিকে চেয়ে সামান্য মাথা ঝোকালো। তারপর একে একে তিনটা লাশ নিয়ে টানতে টানতে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল। যাওয়ার সময় হালকা একটা শিস দিল। লাফ দিয়ে কুকুরটা উঠে দাড়ালো তারপর পিছু নিল রহস্যময়ী রেড ইন্ডিয়ান যুবতীর।

নিজেকে সামলে নিতে কিছুটা সময় নিল ক্রিস। তারপর ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল লিন্ডাকে।

"কে, কে ওটা," ভীত গলায় প্রশ্ন করলো লিন্ডা।
"আমি জানি না। তবে......." অনিশ্চিত গলায় বলল ক্রিস।
"তবে কি, বলো?"
"না কিছু না," একইভাবে অনিশ্চিত গলায় বলল ক্রিস।

সেরাতে আর ঘুম হলোনা ক্রিস আর লিন্ডার। সরাইখানার চারদিকে রক্তে মাখামাখি। পরিস্কার করতে করতে ভোর হয়ে গেল। পূর্ব আকাশে তখন কেবল হালকা লালচে আভা ফুটে উঠেছে। এক কাপ কফি হাতে ক্রিস সরাইখানার বাইরে বের হয়ে আসল। নরম ঠান্ডা একঝলক বাতাস বয়ে গেল ক্রিসের উপর দিয়ে। রানী তোমানের মূর্তি তার জায়গায় নীরবে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু, কিন্তু কি যেন একটা অসামন্জস্যতা চোখে পড়ল ক্রিসের। মূর্তিটার দিকে এগিয়ে গেল সে। হ্যা, এবার বুঝতে পারলো ক্রিস। কুকুরটা রানীর বামদিকে ছিল আগে এখন কিভাবে যেন ডানদিকে চলে এসেছে। আর, আর রানীর ছুরিটা! ছুরিটার কিছু অংশ লালচে হয়ে আছে। রক্ত!!!

রাতে তাদেরকে সাহায্যকারী রেড ইন্ডিয়ান যুবতীর কথা মনে পড়ে গেল ক্রিসের। এখন বুঝতে পারলো, কেন এত চেনা চেনা লাগছিল মেয়েটাকে।

ভয়

মাগরিবের আযান হচ্ছে। এখনো টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার দেওয়া হয়নি। জায়গির মালকিন হাঁস-মুরগি নিয়ে ব্যাস্ত। হাওরের সব রাখাল একে একে ছোট্ট আজমপুর গ্রামটা রেখে চলে যাচ্ছে নিজ নিজ গন্তব্যে। আজ কেন যেন অন্ধকারটা একটু আগেই নেমে এসেছে ঘন কালো হয়ে। বারান্দায় বসে আছে আনাস। অপোয় কখন জায়গির মালকিন টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার দিবেন। খাবার নিয়
ে যেতে হবে মাদ্রাসায়। নামাযটাও পড়া হচ্ছেনা এখনো। মসজিদটাও প্রায় আধা মাইল। এখন নামায পড়তে গেলে যাওয়ার পথে একটা লোকও পাওয়া যাবেনা। আর এই পথে একা যাওয়ার কথা ভাবতেই পারেনা আনাস! অপর দিকে মাদ্রাসায় আছে মাগরিবের পর রুমে ফেরার জন্য হল সুপারের জেরা। আনাস আরিক অর্থেই এখন ভয়ে সিটিয়ে যাচ্ছে! একে তো রাত প্রায় নেমে এসেছে। পথে গোরস্থান, ঈদগাহ্ পাড়ি দিয়ে একা মাদ্রাসায় ফেরা কোনতেই তার একার পে সম্ভব নয়। সে বুঝতে পারে না এই বাড়ির লোকগুলো কেন প্রতিদিনই সন্ধ্যায় খাবার দিতে দেড়ি করে? অথচ তারা নিজেরাও সন্ধ্যার পর এই পথে একা যেতে পারেনা। কিন্তু সে কিছুই বলতে পারেনা। তার ভাবনা একটাই; দুটো ভাত পাওয়া যায়। খাবারটাও ভাল। বোর্ডিংয়ের তুলনায় তো শাহী খাবার।

আবার হল সুপারের বিষয়টাও খুবই বিরক্তিকর! খাবার দেওয়াটা যেহেতু আনাসের এখতিয়ার না। সুতরাং একটু দেড়ি হতেই পারে। কিন্তু তিনি এই নিয়ে কত রকমের বাজে কথা যে বলবেন! “এত খাওন খাওন করস তো পড়তে আইসস কিলা? খালি খাইলে অইব? পড়াটা আগে খাওনটা পড়ে করলেও চলবে! এই সব খানা, লজিং বুঝিনা। মাগরেবের আগে মাদ্রাসায় ঢুকতে না পারলে শাস্তি পাইতে হবে!” এই উভয় সঙ্কট নিয়ে যখন আনাস ভাবনার ভয় নগরে। ঠিক তখনই জায়গির বাড়ির মুরুব্বি এসে বললেন “কি গো পলাশের মা মুন্সি বেডার খাওন দেও নাই?” আনাস কে অবাক করে দিয়ে পলাশের মা বললেন, “এইড কি মুন্সি গো বাবা! নমায যাইতাছে হেয় এখনো বইসা রইছে।” এই মুরুব্বীই আনাসের ভরসা সবসময়। এইবার সাহস নিয়ে আনাসের ভয় আর উভয় সঙ্কটের কথা মুরুব্বরি কাছে বলে। তিনি বলেন, ‘যাও কাইল থিকা আর দেড়ি হবেনা। মুরুব্বী তাকে একটু বুঝিয়ে বলায় পলাশের মা বলেন “আয় হায় কয় কিতা? মুন্সি মানুষ কত সুরা-কেরাত জানে হেরাও নাকি ডরায়! থাওক থাওক কাইল আর দেড়ি অইতনা।”

আনাস টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে রাস্তায় নামে। ঘুটঘুটে অন্ধকার! চারপাশে সুনসান নিরবতা। সব রাখাল হাওর ছেড়ে চলে গেছে। আর কাউকেই দেখা যাচ্ছেনা আশপাশে। আকাশে আবার কালো মেঘের আনাগোনা। হীম-শীতল বাতাসে শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে। এর সাথে যক্তি হলো আবার ভয়। আনাস এখন একটা সবকূল হারানো নাবিক যেন। কোন সিদ্ধান্তই নিতে পারছেনা। সে কি আবার জায়গীর বাড়ি গিয়ে বলবে তাকে একটু এগিয়ে দিতে! নাকি দুয়া-দরূদ পড়ে একা একাই চলে যাবে! নাকি আর একটু অপো করবে দেড়ি করে ফেরা কোন রাখালের জন্য! এই সব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে রাত ভাল করেই ঝেঁকে বসেছে আজমপুর গ্রামের ওপর। আবার ভাবছে এই গ্রামটা মূল গ্রামগুলো থেকে এত দূরে হাওরের পাড়ে কে বানাইছে? এখন তার সব রাগ গিয়ে পড়ল সেই লোকের ওপর। বানাইছে তো বানাইছেই আমার জায়গীরটাই এই গ্রামে কেন দিতে হবে। তার সব রাগ অভিমান এখন মাদ্রাসার বড় হুজুর আর তার বাবার দিকে যেতে লাগল। বড় হুজুর কেন এই দুর আজমপুর তার জন্য পছন্দ করল। আর বাবা! বোর্ডিংয়ে রাইখ্যা খাওয়ায় না কেন?

এইবার তার সব ভাবনার শেষ হয়ে এল। ভাবতে ভাবতেই আনাস বেশ খানিকটা পথ হেটে এসেছে। এখন আর ফিরে যাওয়ার কোন মানে হয় না। আর ফিরলেই লাভ কী ! শুনতে হবে কিছু হাসাহাসি! সব শেষে বলবে থাক আজ যাওয়ার দরকার নেই থাক। সকালে যাইবানে। সুতরাং নিজের জানা কয়েকটা দুয়া-দুরূদ পড়েই নিজের সাহসের উপর ভর করে হাটা দেয় আনাস।

এইবার আরেক উপদ্রব শুরু হয় আকাশে থেমে থেমে বজ্রপাত। ঠান্ডা বাতাস। কবর খনার ভয়! ঈদগাহে জমু পাগলার ডাক! এই পাগলা কিছুই করেনা তব্ওু তাকে আনাসের ভয়। বলা যায় জমু তাকে আদরই করে বেশি। যা সে আর কাউকে করেনা।

হাটছে হাটছে তো হাটছেই আনাস। কিন্তু পথ যেন শেষ হতেই চায়না। বিপদের সময় একটা আরেকটা বিড়ম্বনা। কথায় আছে বিপদের রাত শেষ হতে চায় না। মানুষের ভয়ের সময়টাতে নাকি দুনিয়ার সব ভয়ের কথা, ভয়ের ঘটনা, বিপদের আশংকা মনে এসে ভীড় করে! আনার্সেও হয়েছে সেই অবস্থা...

বেশ কদিন যাবৎ এলাকায় একটা গুজবের ডাল-পালা মেলে এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আনাস এটাকে গুজবই মনে করে এসছে। কিন্তু এখন কে যেন তার কানে ফিসফিস করে বলছে। আনাস সাবধানে যা! সড়কের দুই পাশেই ‘উজাউরির’ গাছ। উজাউরির গাছে আছে ভয়কর এক পোকা যদি কামড় দেয় আড়াই ঘন্টার মধ্যে মরণ নিশ্চিত! এই কথা সে আগ্ওে আনেক শুনেছে। শুনেছে রাজী গ্রামে দুইজন মারা গেছে। মদনে বহু মানুষ মারা গেছে। তবে সে কখনই মনে করেনি খবরটা সত্য। কারণ এই জাওয়ারেও অনেক উজাউরির গাছ আছে। কিন্তু এখনো এখানে কেউই তো এমন পোকার কোন হদিসই পায়নি! তাই এটা তার মাঝে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেনি। এখন সেই ভয়ও তার মনে প্রবল আতংকের সৃষ্টি করছে। থেকে থেকে পথের দুই পাশে তাকাচ্ছে এই বুঝি সেই পোকাটা তার বাহুতে এসে বসেছে! অজান্তেই হাত ঝেড়ে পোকাট ফেলে দিতে চচ্ছে । পরনেই আবার স্বাভাবিক হওয়ার জন্য। নিজের বোকামীতে নিজেই হেসে উঠছে। তবে নিজের হাসি নিজেকেই ভরসা দিচ্ছে না। আবার দুয়া-দুরূদ পড়ে নতুন করে পথ হেটে যাচ্ছে আনাস।

পথটা এখনো শেষ হচ্ছে না। আমাসের কাছে মনে হছে সে প্রায় এক ঘন্টা ধরে পথ হাটছে। অথচ আধা ঘন্টার পথ এখনো শেষ হচ্ছেনা। নিজের সাথে নিজেই কথা বলছে...
_ আমি কি কানাওলার পাল্লায় পড়ছি? নাহ্ আমি তো দুয়া পড়ছি কানাওয়ালা আমাকে ধরতে পারবেনা। কানাওয়ালা না ধরলে এখনো কেন মাদ্রাসায় যেতে পারছিনা! নাকি আমি পথ ভুল করেছি? নাহ তাও সম্ভব না। পথ তো একটাই! তাইলে আমি এখন কোতথায়? কল্পনায় শুনতে পায় কে যেন তাকে বলছে...
_আরে আনাস তুই পথও হারাসনি। কানাওলাও ধরেনি তোরে। তুই ঠিক পথেই আছিস আর একটু। মাত্র তো পাঁচ মিনিট হলো। এখনই ভয় পাওয়ার কী হইছে। যা হেটে যা এই তো গোরস্থানটা এটা পার হলেই আর কোন ভয় নেই।

মাত্র পাঁচ মিনিট! নাহ আমার মনে হয় কোথাও কোন সমস্যা হচ্ছে। তাইলে আমি কি অবচেতন জগতে চলে যাচ্ছি ক্রমশঃ ভয়টা আরোও বেড়ে যায় আনাসের। চার পশে আবার ভাল করে দেখে নিতে চায়। কিন্তু অন্ধকারে জন্য কিছুই দেখা যায়না। কয়েকটা জোনাকী আর ঝিঝিদের ডাক ছাড়া নিথর এই চার পাশ। এইবার আর বাধ দিতে পারেনা আনাস তার অনুভুতিকে। অজান্তেই চোখের পানি নামতে থাকে। এক সময় চিৎকার করে কাঁদতে চায়। আশ্চর্য! সে চিৎকার দিতে পারছেনা! কে যেন তার গলা ধরে আছে। পরনেই শুনতে পায় কে যেন খুব মিহিন সুরে বলছে, “চিৎকার করবিনা! বেশি কিছুনা আমরা তোরে একটু দেখবো তার পর আমার মাদ্রাসায় গিয়া দিয়া আসমু। মেলাদিন কোন যেতা মানুষ দেহিনা! মাইনষে আমগোরে ভয় পায়। একা একা এই পথে যায় না। তাই মানুষ দেখবার পারিনা। আজকা তোরে পাইছি। বড় হুজুরের কাছে একটা খবরও আছে। তুই একটু খাড়া।”

আনাস কিছু একটা বলতে যাবে। এমন সে নিজেকে শাসন করে “ আরে সব মনের কল্পনা! আনাস তুই এখন অনেক বড় হয়েছিস। এইটে পড়িস। এইটুকোতেই ভয় পাওয়া শুরু করলি?” আবার নিজেকে ধাতস্ত করতে মাথাটাকে ডানে-বামে মোছড় দেয়। চারপাশটা ভাল করে দেখে নেয়। সে দেখতে পায় কবর কানার মাঝামাঝি চলে এসছে। এইবার নিজের ভয়টাকে তাড়াতে একটা দৌড় দেয় আনাস। ভাবে এইতো একটু। তারপর আর কোন সমস্যা নেই। আনাস দৌড়াতে থাকে থাকে দৌড়াতেই থাকে। অবাক হয়ে ল্য করে সে যেখান থেকে দৌড় শুরু করেছিল সেই জায়গাটা থেকে একট্ওু এগিয়ে যেতে পারছেনা। মনে হয় হাজারো রশি দিয়ে তার হাত পা বাধা। শত চেষ্টা করেও সামনে যেতে পারছে না।

এবার তার মনে তীব্র ভয় এসে হানা দেয়। আনাস দেখতে পায় লাখে লাখে কঙ্কাল তার দিকে ছুটে আসছে। সব কঙ্কালের একটাই কথা তোরা জীবিত মানুস আমাদের ভয় পাস কেন? আমাদের কি কোন মতা আছে? আজকে শপথ করতে হবে আর কোন দিন মৃত মানুষকে বয় পাবিনা। যদি ভয় পাস তাইলে আজকে তোর একদিন আমগোর একদিন।
আনাস প্রাণপনে চেষ্টা করছে দৌড়ে পালাতে। অথবা একটা চিৎকার দিতে। অদূরেই আনাস দেখতে পাচ্ছে তার খোজে কয়েকজন ছাত্র হারিকেন নিয়ে আসছে । আনাস তাদের ডাকতে চাচ্ছে । কিন্তু সে কোন কথা বলতে পারছেনা। চারপাশ থেকে কঙ্কালগুলো তাকে ঘিরে ধরেছে। এইবার আনাস শেষ চেষ্টা হিসেবে আয়াতুল কুরসি পাঠ করতে থাকে। দেখতে পায় ওরা একটু সরে যাচ্ছে। আনাস তার খোঁজে আসা বন্ধুদের আর দেখতে পায়না। এখন সে ভাবছে এটাও মনে হয় তার মনের ভুল। আজ পুরো সন্ধ্যাটাই তার নানা ভুল ভাবনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরণেই সে শুনতে পায় তার লজিং বাড়ির মুরুব্বীর গলা। শুনতে পায় তার বন্ধুদের গলা। কিন্তু সে ভেবে পায়না তারা তাকে কেন দেখতে পাচ্ছেনা! সুতরাং এটাও তার মনের দুর্মতি! এমনটা ভেবে দেখে সে আসলে রাস্তায় নেই। আছে ঈদগাহে। আবার চিৎকার করতে চায়! নাহ্ কঙ্কালদের ভয়ানক চিৎকার আর অট্টহাসিতে তার চিৎকার শুন্যে মিলিয়ে যায়। এবার আনাস আর কোন আশা দেখতে পায় না। শেষ চেষ্টা হিসেবে দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে এগিয়ে যেতে থাকে। দেখতে পায় সেই সব কঙ্কালের জঞ্জাল কিছুটা সরে যাচ্ছে। তবে এক দিকে সে যায় অপর দিক থেকে অন্যরা আসে তাকে আক্রমণ করতে। আনাসের আক্রমণাত্বক ভঙ্গি দেখে সব অশরীরীরাও আক্রমণাত্বক হয়ে ওঠে।
এবার আর কোন পথ না দেখে আনাসের নিজেকে নিয়তির উপর ছেগে দিতে ইচ্ছেে হয়। এমন সময় দেখতে পায় জমু পাগলা কোত্থেকে যেন খুবই খোশ মেজাজে সে উপস্থিত হয়। বলতে থাকে আয়হায় আমার জন্য এক খ্ওান কে আনছেরে। আনাস দেখে জমু ধরে ধরে এই সব কঙ্কাল খাওয়া শুরু করছে।

জমুকে দেখার পর আনাসের একটু সাহস আসছিল সেটাও এখন আর নেই। আনাস প্রাণ পণে একটা চিৎার দেয়। এর পর শুধু শুনতে পায় জমু বলতেছে... এইহান কেডারে ...

আনাস বস শুনতে পাচ্ছে কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা। চোখটাও খোলার সাহস সে আর পাচ্ছেনা। সে দেখছে তার খোজে আসা সবাই তাকে ধরাধরি করে মাদ্রাসার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

পর দিন ফজরের নামাজের পর জানা গেল রাত ৮টার দিকে আনাসকে বেহুষ অবস্থায় কবর খানার পাশের রাস্তা থেকে বোর্ডিং সুপার আর আনাসের কয়েকজন বন্ধু উদ্ধার করে আনে। তারা আর আসতে দেড়ি হওয়ার খোজ করতে গিয়ে আনাস কে বেহুশ অবস্থায় পেয়েছিল।

আর জমু পাগলা! আজ চার দিন যাবৎ ডায়রিয়া হয়ে হাসপাতালে মরণপন্ন অবস্থায়।

বড় হুজুরের কাছে আনাস ও তার বন্ধুরা পুরো ঘটনার বিবরণ জানায়। আমরা সবাই অপোয় আনাসের জায়গীর নিয়ে বড় হুজুরের সিদ্ধান্তের ...

ছোট সত্য ঘটনা

আজকে আপনাদের সাথে ছোট কিন্তু সত্য একটা ঘটনা শেয়ার করবো।

আমাদের গ্রামের বাড়ি নড়াইলে। বাস থেকে নেমে ১৫ মিনিট মেঠো পথ দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। আমি প্রতি ১৫ দিনে একবার করে যেতাম বাড়িতে। এখন দেশের বাইরে থাকি তাই যাওয়া হয় না। আপনাদের সাথে যেদিনের কথা শেয়ার করবো তখন আমি ইন্টারে পড়তাম। ঢাকা কলেজে। কলেজ হটাত একদিন বিকালের দিকে বন্ধ দিলো কিছু রাজনৈতিক কারণে। ভাবলাম বাসায় চলে যাবো। মাকে ফোন করে জানালাম। কিন্তু স
েদিন বাসায় রাতে আমাকে আনতে যাবার মতো কেউ ছিল না। তাই মা বললেন আসিস না। আমি তবু জিদ করে গেলাম।

বাস থেকে নেমে হাঁটা ধরলাম বাড়ির দিকে। রাস্তা পরিষ্কার। তখন শীতের শুরু। তাই মানুষজন একদমই নেই। রাস্তায় কিছুদূর যাবার পর একটা ডোবা পড়ে। তার পাশেই এক বিশাল তাল গাছ। এখানে নাকি অনেকেই খারাপ জিনিস দেখেছে। যদিও আমার সাথে কখনো এমন কিছু ঘটে নি। এবার অনেকদিন পরে বাসায় যাচ্ছি, তাই আনন্দিত ছিলাম।

ঠিক ডোবার পাশে আসার সাথে সাথে হটাত পানিতে কি যেন ঝাঁপিয়ে পড়ার আওয়াজ পেলাম। আকাশে চাঁদ ছিল। মোটামুটি ভালোই দেখা যাচ্ছিলো। সেই আলোয় দেখলাম পানিতে একটা মানব দেহ ভাসছে। সাদা কাপড় পড়া। মানে কিভাবে বুঝাব বুঝতেছি না। আসলে সেটা এক মেয়ের দেহ। শরীরে শাড়ি পড়া, কিন্তু পুরো শরীর ঢাকা না। মনে হলো কেউ মেরে হয়তো ফেলে দিয়েছে। সারা শরীরে ভয়ের একটা স্রোত বয়ে গেলো। আগেই বলেছি আমার ভুতের ভয় নেই, তবে এসব ব্যাপার এড়িয়ে চলি আমি। চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম কেউ আছে কিনা। যেহেতু আমি এই মাত্র পানিতে এটা ফেলার আওয়াজ শুনেছি তাহলে অবশ্যই যে ফেলেছে সে আছে আশেপাশে। ডোবার পুরোটা দেখা যায় রাস্তা থেকে। অবাক হয়ে দেখলাম আশেপাশে কেউ নেই। কি করবো ভাবতেছি, এমন সময় হটাত দেখলাম সেই দেহটা টুপ করে পানিতে ডুবে গেলো। কেউ যেন নিচ থেকে টেনে নিয়ে গেলো। দেহটা ডুবল খাড়া হয়ে। যারা কুঁচ দিয়ে মাছ শিকার করেছেন তারা বুঝবেন আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি। কুঁচ মারার পর তা যেমন সোজা পানিতে ডুবে যায় তেমন। দেহটা ভাসতে ভাসতে হটাত পানির উপর প্রায় দাঁড়িয়ে পড়লো। এরপর আস্তে আস্তে ডুবে গেলো।

আমার মাথা ঘুরাচ্ছিল। আল্লাহর নাম নিয়ে চিৎকার করতে করতে এক দৌড়ে বাসার দিকে যেতে লাগলাম। জানি না সেদিন কিভাবে বাসায় পৌঁছে ছিলাম। আধুনিক ছেলে হয়ে এমন অদ্ভুত ব্যাপার বিশ্বাস করার কিছু নেই। কিন্তু এরপরেও আমার সাথে খুব ভয়ানক কিছু ব্যাপার ঘটে। যাতে আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হই যে এরা আছে। অবশ্যই আছে।

আজকে আপনাদের সাথে ছোট কিন্তু সত্য একটা ঘটনা শেয়ার করবো।

আমাদের গ্রামের বাড়ি নড়াইলে। বাস থেকে নেমে ১৫ মিনিট মেঠো পথ দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। আমি প্রতি ১৫ দিনে একবার করে যেতাম বাড়িতে। এখন দেশের বাইরে থাকি তাই যাওয়া হয় না। আপনাদের সাথে যেদিনের কথা শেয়ার করবো তখন আমি ইন্টারে পড়তাম। ঢাকা কলেজে। কলেজ হটাত একদিন বিকালের দিকে বন্ধ দিলো কিছু রাজনৈতিক কারণে। ভাবলাম বাসায় চলে যাবো। মাকে ফোন করে জানালাম। কিন্তু স
েদিন বাসায় রাতে আমাকে আনতে যাবার মতো কেউ ছিল না। তাই মা বললেন আসিস না। আমি তবু জিদ করে গেলাম।

বাস থেকে নেমে হাঁটা ধরলাম বাড়ির দিকে। রাস্তা পরিষ্কার। তখন শীতের শুরু। তাই মানুষজন একদমই নেই। রাস্তায় কিছুদূর যাবার পর একটা ডোবা পড়ে। তার পাশেই এক বিশাল তাল গাছ। এখানে নাকি অনেকেই খারাপ জিনিস দেখেছে। যদিও আমার সাথে কখনো এমন কিছু ঘটে নি। এবার অনেকদিন পরে বাসায় যাচ্ছি, তাই আনন্দিত ছিলাম।

ঠিক ডোবার পাশে আসার সাথে সাথে হটাত পানিতে কি যেন ঝাঁপিয়ে পড়ার আওয়াজ পেলাম। আকাশে চাঁদ ছিল। মোটামুটি ভালোই দেখা যাচ্ছিলো। সেই আলোয় দেখলাম পানিতে একটা মানব দেহ ভাসছে। সাদা কাপড় পড়া। মানে কিভাবে বুঝাব বুঝতেছি না। আসলে সেটা এক মেয়ের দেহ। শরীরে শাড়ি পড়া, কিন্তু পুরো শরীর ঢাকা না। মনে হলো কেউ মেরে হয়তো ফেলে দিয়েছে। সারা শরীরে ভয়ের একটা স্রোত বয়ে গেলো। আগেই বলেছি আমার ভুতের ভয় নেই, তবে এসব ব্যাপার এড়িয়ে চলি আমি। চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম কেউ আছে কিনা। যেহেতু আমি এই মাত্র পানিতে এটা ফেলার আওয়াজ শুনেছি তাহলে অবশ্যই যে ফেলেছে সে আছে আশেপাশে। ডোবার পুরোটা দেখা যায় রাস্তা থেকে। অবাক হয়ে দেখলাম আশেপাশে কেউ নেই। কি করবো ভাবতেছি, এমন সময় হটাত দেখলাম সেই দেহটা টুপ করে পানিতে ডুবে গেলো। কেউ যেন নিচ থেকে টেনে নিয়ে গেলো। দেহটা ডুবল খাড়া হয়ে। যারা কুঁচ দিয়ে মাছ শিকার করেছেন তারা বুঝবেন আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি। কুঁচ মারার পর তা যেমন সোজা পানিতে ডুবে যায় তেমন। দেহটা ভাসতে ভাসতে হটাত পানির উপর প্রায় দাঁড়িয়ে পড়লো। এরপর আস্তে আস্তে ডুবে গেলো।

আমার মাথা ঘুরাচ্ছিল। আল্লাহর নাম নিয়ে চিৎকার করতে করতে এক দৌড়ে বাসার দিকে যেতে লাগলাম। জানি না সেদিন কিভাবে বাসায় পৌঁছে ছিলাম। আধুনিক ছেলে হয়ে এমন অদ্ভুত ব্যাপার বিশ্বাস করার কিছু নেই। কিন্তু এরপরেও আমার সাথে খুব ভয়ানক কিছু ব্যাপার ঘটে। যাতে আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হই যে এরা আছে। অবশ্যই আছে।

।। রহস্যময় লোকটি ।।

স্লামালাইকুম ভাই, একটু সরবেন ওই সিটটা আমার।

তাকিয়ে দেখি কালো, রোগা মত অদ্ভূত দর্শনের একজন লোক আমার পাশের সিট টাকে ইঙ্গিত করে দাঁড়িয়ে আছে। তাড়াতাড়ি সালামের জবাব দিয়ে সরে তাকে ভেতরে ঢোকার জন্য জায়গা করে দিলাম। ঢোকার সময় লোকটার গায়ে হাত লাগার পর তার শরীরটা কেমন যেন ঠান্ডা ঠান্ডা লাগল। একটু ভয় পেয়ে গেলাম। লোকটা মনে হয় ব্যাপারটা বুঝতে পারল এবং রহস্যময় মুচকি একটা হাসি দিল। আমি কিছু
ক্ষণ লোকটার দিকে তাকিয়ে অন্য পাশে ফিরে বসলাম। বাসটা ছেড়ে দিল।
অনেকদিন পর নানার বাড়িতে যাচ্ছি। বিভিন্ন সমস্যার কারনে মাঝখানে কয়েক বছর যাওয়া হয় নি। এবার একটা বড় ধরনের ছুটি পাওয়ার ফলে রওনা দিলাম। বাড়িতে নানা-নানী আর দূর সম্পর্কের দুইজন মামাতো ভাই ছাড়া কেউ থাকে না। আগে অনেক লোকজন থাকত। আমরাও বিভিন্ন সময় সেখানে চলে যেতাম। সেইসব স্মৃতি মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে যায়। কত মজাই না করতাম।
-ভাই কি নানার বাড়ি যাচ্ছেন?
হঠাৎ লোকটা প্রশ্ন করে বসল। কিছুটা অবাক হয়ে জবাব দিলাম,
-জি, আপনি কি করে বুঝলেন?
-না আপনাকে ওই বাড়িতে দুই একবার দেখছি বলে মনে হচ্ছে। আপনার নানার নাম করিম উদ্দিন ভূঁইয়া না?
-জি, আপনি আমার নানাকে চেনেন?
-আগে প্রায় সময় ওই বাড়িতে যেতাম, এখন আর যাওয়া হয় না।
মনে মনে ভাবলাম বাড়িতে তখন অনেক লোকই আসত, সবাইকে তো আর চেনা সম্ভব না। ওদের মধ্যে কেউ একজন হবে আর কি। এমন সময় বিভিন্ন দিক থেকে হর্ণের শব্দ কানে আসতে শুরু করল। তাকিয়ে দেখি সামনে বিশাল জ্যাম লেগে গিয়েছে। আজকে মনে হয় বাড়ি যেতে অনেক রাত হয়ে যাবে।
-আপনার নাম কি?
-আমার নাম সগির। আপনার নানাদের পাশের গ্রামে থাকতাম।
-থাকতাম মানে, এখন আর থাকেন না?
-নাহ।
বলে লোকটা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর হুট করে একটা কথা জিজ্ঞেস করে বসল,
-আপনি কি জিন-ভূতে বিশ্বাস করেন?
হঠাৎ এই ধরনের প্রশ্ন করায় একটু অবাক হলাম।
-না, কিন্তু হঠাৎ এইগুলা জিজ্ঞেস করতেছেন কেন?
-ও আপনি মনে হয় আপনার নানার বাড়ির সামনের বাঁশঝাড় টার কথা শোনেন নাই।
-না, ওই বাঁশঝাড়ের আবার কি হইল?
কিছুটা অবাক হলাম।
-আছে, ওইটা সম্পর্কে বিরাট এক কাহিনী আছে। ওই কাহিনী শুনলে জিন-ভূতে বিশ্বাস করা শুরু করবেন।
মনে মনে ভাবলাম, প্রত্যেক গ্রামেই এ ধরনের কিছু কাহিনী প্রচলিত থাকে। এগুলো বিশ্বাস করার কোন মানে হয় না।
-আপনার যদি সমস্যা না থাকে তাহলে বলতে পারেন।
-আচ্ছা বলি তাহলে, এই কাহিনীটা ঘটছিল আমার নিজের জীবনে।
এরপর লোকটা তার কাহিনী বলা শুরু করল,
আমাদের গ্রামের এক বাড়িতে ১৬ বছর বয়সী একজন যুবতী মেয়ে থাকত। বাড়িতে তার সাথে তার বাবা মা আর ছোট একটা ভাই থাকত। মেয়েটি দেখতে বেশ সুন্দরী ছিল। যার ফলে প্রায় সময় গ্রামের বখাটে ছেলেরা তাকে বিরক্ত করত। একবার অন্য গ্রাম থেকে আসা এক ছেলে তাকে প্রেমের প্রস্তাব করে। কিন্তু মেয়েটা তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়, যার ফলে ছেলেটা তাকে স্কুলে যাওয়ার পথে এবং বিভিন্ন সময় দেখা হলেই বিরক্ত করত।
একবার ওই ছেলেটা দলবল নিয়ে গ্রামে এসে মেয়েটাকে রাস্তা থেকে ধরে ওই বাঁশঝাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে তারা মেয়েটাকে ধর্ষণ করে। এরপর তারা মেয়েটাকে মেরে ফেলে এবং সেখানেই ফেলে রেখে চলে যায়। পরদিন ওই জায়গা থেকে মেয়েটার লাশ উদ্ধার করা হয়, এবং ঈমাম সাহেবের ফতোয়া অনুযায়ী জানাজা ছাড়াই কবর দেওয়া হয়। এর আগে পুলিশের লোকজন এসে দেখে যায়, কিন্তু তারা কিছুই করতে পারে না। এই ঘটনার পর মেয়েটার পরিবার ওদের ঘরবাড়ি ফেলে অন্য কোথাও চলে যায়।
লোকটা একবারও না থেমে বলে যেতে থাকে,
তখন থেকেই গ্রামের লোকজন বলাবলি করতে থাকে ওই বাঁশঝাড়ে নাকি প্রায় সময় একটা মেয়েকে একা বসে কাঁদতে দেখা যায় এবং যুবক ছেলে দেখলেই ধরে নিয়ে যায়। তাই লোকজন রাতের বেলা ওই রাস্তাটা খুব একটা বেশি দরকার না হলে ব্যবহার করত না। আমার বয়স তখন খুব একটা বেশি ছিল না, তাই সবাই আমাকে ওই জায়গা দিয়ে চলতে নিষেধ করত। কিন্তু আমি এসব বিষয়কে খুব একটা পাত্তা দিতাম না। এগুলোকে গুজব বলেই মনে করতাম। তারপরও ওই জায়গা দিয়ে খুব একটা যেতাম না।
এক রাতের ঘটনা, এখনো পুরোপুরি মনে আছে। সেরাতে আমি বাজার করে বাড়ি ফিরছিলাম। ফেরার সময় ভাবলাম আপনার নানার বাড়ি থেকে ঘুরে যাই। তখন ওই রাস্তাটা দিয়ে রওনা দিলাম। যদিও ভূত-পেত্নিতে খুব একটা বিশ্বাস করতাম না, তারপরও ওইদিন একটু ভয় ভয় করছিল। আকাশে চাঁদের আলো ছিল বলে টর্চ টা জ্বালানোর প্রয়োজন বোধ করলাম না। চলার পথেই একটা কুকুর দেখতে পেলাম। কুকুরটাকে দেখেই মনে মনে একটু শান্তি পেলাম, যাক আমি ছাড়াও একটা জীবিত প্রাণী আছে। কুকুর টাও কি ভেবে আমার পিছু পিছু আসতে শুরু করল। তখন কিছুই বুঝি নাই, ভাবছিলাম কুকুরটা আমার বাজার করা জিনিসগুলোর লোভেই পিছু পিছু আসছে। আর কুকুরটা সাথে আছে বলে সাহসটাও একটু বেড়ে গিয়েছিল, তাই আর পাত্তা দেই নাই। কিছুদূর যাওয়ার পর যখন বাঁশঝাড় টার কাছে আসলাম তখন হঠাৎ করে কার যেন হাসির শব্দ কানে বাজল।
এইবার একটু আগ্রহ বোধ করলাম। একটু ভয় ভয়ও লাগতে শুরু করল। ওই রাস্তা দিয়েই তো আমাকে বাড়ি যেতে হবে। লোকটা না থেমে বলে যেতে লাগল,
এই জায়গায় এত রাতে কে হাসাহাসি করতে যাবে? ভাবতেই বুকটা একটু কেঁপে উঠল। পরক্ষণেই দেখি বাঁশঝাড় টার তলায় একটা মেয়ে বসে কান্না করছে। সাথে সাথে ভয়ে পুরোপুরি জমে গেলাম। তখন খেয়াল হল তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যাওয়া উচিৎ। কিন্তু কিছুতেই পা নাড়াতে পারছিলাম না, মনে হল কেউ যেন আটকে রেখেছে। কুকুরটা তখনো আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। একটু পর লক্ষ্য করলাম মেয়েটা উঠে দাঁড়াল, এবং হাতের ইশারা দিয়ে আমাকে ডাকতে শুরু করল। অদ্ভূত একটা আকর্ষণ অনুভব করলাম নিজের ভেতর। এবং সম্মোহিতের মত তার দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। আমার আগমন দেখে মেয়েটা হাঁটা শুরু করল, আমিও একইভাবে তার পিছু হাঁটতে লাগলাম। হাঁটতে হাঁটতে কতদূর পর্যন্ত গিয়েছি খেয়াল ছিল না। আসলে কোন দিকেই খেয়াল ছিল না। মনে হচ্ছিল আমাকে সম্মোহন করে রাখা হয়েছে। একসময় একটা পরিত্যক্ত বাড়ির সামনে এসে মেয়েটা থামল। এরপর আমাকে বাড়ির ভেতরে ঢোকার নির্দেশ দিল। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। একটু একটু করে আগানোর চেষ্টা করলাম। এমন সময় দেখলাম একটা কুকুর কোথা থেকে যেন দৌড়ে এসে মেয়েটার উপর ঝাপিয়ে পড়ল, সেই কুকুরটা যেটা আমার পিছু নিয়েছিল। শুরু হয়ে গেল মেয়েটা আর কুকুরটার মাঝে লড়াই। কুকুরটা মেয়েটাকে আঁচড়ে-কামড়ে ছিড়ে ফেলতে চাইছে, মেয়েটাও সমান তালে কুকুরটাকে আঘাত করছে। ততক্ষণে কিছুটা চেতনা ফিরে আসতে শুরু করল। লড়াইটা এক সময় খুব ভয়ংকর হয়ে গেলে আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। তখন জ্ঞান হারিয়ে সেখানেই শুয়ে পড়লাম।
একবার ভাবলাম লোকটা হয়ত বানানো গল্প বলছে, কিন্তু লোকটার চেহারা দেখে ভাবনাটা বাতিল করে দিতে হল। তখনও বলে চলছে।
এরপর আর কিছুই মনে নেই। পরে সকাল হলে যখন ঘুম ভাঙল, তখন দেখলাম অনেকগুলো মুখ আমার দিকে ঝুঁকে রয়েছে। তাড়াতাড়ি উঠে বসার চেষ্টা করলাম, কিন্তু প্রচন্ড দুর্বলতার কারনে উঠতে পারলাম না। কি হয়েছে বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম। পরক্ষণেই গত রাতের কথা মনে পড়ল। তারপর আস্তে আস্তে সব বুঝতে পারলাম।
আমাকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ না দিয়ে লোকটা একমনে বলে যেতে লাগল,
এরপর একটু সুস্থ হওয়ার পর বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে শুনলাম, তিনদিন নাকি আমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে লোকজন লাগিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজির পর ওই মেয়েটার পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে অজ্ঞান অবস্থায় আমাকে পাওয়া যায়। এর একদিন পর সকালে আমার জ্ঞান ফিরে আসে। আর আমি ভাবছিলাম মাত্র একরাত ঘুমিয়েছি। এরপর থেকেই আমার মধ্যে কিছু রহস্যময় আচরণ শুরু হয়।
-কি ধরনের রহস্যময় আচরণ?
এবার সুযোগ পেয়ে লোকটাকে বাধা দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। লোকটা কোন জবাব না দিয়ে রহস্যময় একটা হাসি উপহার দিল। বুঝতে পারলাম লোকটা এ বিষয় নিয়ে আর কিছু বলতে চায় না। এরপর লোকটার সাথে পুরো রাস্তায় আর কথা হয় নি। আমি বিষয়টার ব্যাখ্যা কি হতে পারে তা নিয়ে অনেক্ষণ চিন্তা করতে লাগলাম। কিন্তু চিন্তা করেও কোন ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারলাম না। শেষে ভাবলাম পৃথিবীতে কত রহস্যময় ব্যাপার ঘটে থাকে সব কিছুর ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া সম্ভব না।

বাসটা যখন পৌঁছাল তখন রাত ১০ টা বেজে গিয়েছে। রাস্তায় জ্যামের কারনে বেশি দেরি হয়ে গেছে। এত রাতে একা যেতে হবে ভেবে একটু ভয় ভয় লাগল। তখন লোকটাকে বললাম একসাথে চলেন। তিনি এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন। একটু খটকা লাগলেও দুজন মিলে হাঁটা শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে খুব একটা কথা হয় নি। একসময় ওনার গল্পের সেই রাস্তার ধারে চলে আসলাম, পাশে লোকটা থাকা সত্ত্বেও ভয়টা একটু বাড়তে শুরু করল। কিছুক্ষণ পর যখন বাঁশঝাড় টার কাছে আসলাম তখন হঠাৎ দেখলাম খুব সুন্দর চেহারার একজন মেয়ে একটা কুপি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। কুপির কম্পমান শিখা টার কারনে মেয়েটার চেহারাও কেঁপে কেঁপে উঠছে। প্রচন্ড ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেলাম। পরক্ষণেই পাশে তাকিয়ে দেখি আমার সাথের লোকটা নেই। আবার বাঁশঝাড় টার দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটাও হাওয়া হয়ে গেছে। ভয়ে আতঙ্কে আমার অবস্থা তখন দিশেহারা। তাড়াতাড়ি করে কোনমতে পা চালিয়ে বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। বারবার মেয়েটির সুন্দর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল।
পরে নানাকে জিজ্ঞেস করার পর জানতে পারলাম সগির নামের সেই লোকটিই নাকি মেয়েটাকে ধর্ষণ করার পর হত্যা করেছিল। একদিন ওই পথে যাওয়ার সময় সে রহস্যজনক ভাবে হারিয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকে তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় নি। এবং সে যে কাহিনী শোনাল তার অধিকাংশই নাকি মিথ্যা ছিল। এই কথা শোনার পর বড়সড় একটা ঢোঁক গিললাম। সেইদিন কি তাহলে একটা ভূতের সাথে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি? ভাবতেই কেমন একটা শিরশিরে অনুভূতি হল।

অনেক চিন্তা করেও এই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পেলাম না। পৃথিবীতে কতই না রহস্যময় ব্যাপার ঘটে থাকে।

একটি সত্যি ঘটনা

এটি একটি সত্যি ঘটনা যা বছর চারেক আগে আমার সাথে ঘটেছিলো।। সে রাতে আমি আমার গ্রামের বাড়ি চট্রগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে ফিরছিলাম।। প্রায় ঘণ্টা তিনেক একটানা গাড়ি চালিয়ে কিছুটা ক্লান্ত ছিলাম।। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটার চিন্তায় এক মুহূর্তের জন্যও অসতর্
ক হই নি।।

রাত তখন প্রায় ২ টার মতো বাজে।। এতো রাতে ঢাকায় ফেরার মূল কারন হল, তারপরের দিন সকাল ১০ টায় আমার অফিসে একটা জরুরী মিটিং আছে।। যাই হোক, আসার পথে খাজা বাবার মাজার নামে একটা জায়গা পড়ে।। সেই জায়গা নিয়ে অনেক কুসংস্কার রয়েছে, যে সেখানে নাকি প্রচুর পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটে।। চালক প্রায়ই গাড়ির ব্যাল্যান্স হারিয়ে ফেলে, অথবা ব্রেক জ্যাম হয়ে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি।। রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা ছিল।। শুধুমাত্র রাস্তায় কিছু ট্রাক আর গুটিকয়েক প্রাইভেট কার।।

আমি আনুমানিক ৭০-৮০ কিমি বেগে গাড়ি ছুটাচ্ছিলাম।। রাস্তার উপর তীক্ষ্ণ নজর।। হটাত একটা মোড় ঘোরার সময় আচমকা দেখলাম একটা লোক রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।। লোকটার পড়নে একটা ছেড়া ফাটা হাফ প্যান্ট।। গায়ে কোনো কাপড় নেই।। মুখে জঙ্গলের মতো দাড়ি।। চোখগুলো আলো পড়ে ঝিকঝিক করছে।। হলদে দাঁতগুলো দেখে অন্য সময় হয়তো ঘেন্না লাগতো।। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার গাড়ি তার গায়ে আঘাত করবে অথচ মুখে হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার গাড়ির দিকে।। ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম।। ব্রেক চেপে ধরবো যে, সেই চিন্তাও তখন মাথায় আসছিলো না।। সত্যি করে বলতে গেলে, যেই স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছিলাম, সেই স্পীডে ব্রেক করলেও তা ঐ লোকটাকে সজোরে ধাক্কা দিবে।। নিজেকে ফিরে পেলাম হটাত।। প্রানপ্রনে ব্রেক চেপে ধরলাম।। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।। গাড়িটি হেঁচড়ে যেতে লাগলো লোকটির দিকে!! একদম শেষ মুহূর্তে চোখটা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেলো।। আশা করছিলাম, গগন বিদারি কোনো চিৎকার শুনবো, কিন্তু অবাক করে দিয়ে কানে এলো কেউ যেনও পাগলের মতো হেসে উঠলো।।

আমার গাড়ি লোকটাকে বেধ করে চলে গেলো।। বেধ করে বলছি কারন, আঘাতের কোনো শব্দ আমি পাই নি।। যাই হোক, সজোরে ব্রেক চাপায় গাড়িটি ২০-২৫ মিটার সামনে গিয়ে থেমে গেলো।। দ্রুত দরজা খুলে বের হলাম।। আশ্চর্য, এতক্ষণ রাস্তায় অনেক গাড়িকেই সাইড কাটিয়েছি।। অনেক গাড়িই আমাকে পাশ করে সামনে এসেছে, কিন্তু এই মুহূর্তে যতদূর দৃষ্টি যায় কোনো গাড়ি দেখতে পাচ্ছি না।। যাই হোক, এতো কিছু ভাবার মতো শক্তি তখন ছিল না।। প্রায় দৌড়ে সেই জায়গায় এলাম যেখানে লোকটিকে দেখতে পেয়েছিলাম।। কিন্তু, এসে কাউকে দেখলাম না।। ভাবলাম ধাক্কা খেয়ে হয়তো ছিটকে দূরে গিয়ে পড়েছে।। প্রায় মিনিট দশেক আঁতিপাঁতি করে খুজলাম।। কিছুই দেখলাম না।। আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে রাস্তাটা নির্জনই রইলো।। একটা গাড়ি দেখলাম না।।

একরকম অমানুষিক কষ্ট উপলদ্ধি করলাম মনের ভেতর।। একটা মানুষকে মেরে ফেলেছি!! সে রাতে বহু কষ্টে গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফিরেছিলাম।। অফিসের মিটিংটা জয়েন করে এরপর এক সপ্তাহের ছুটি নেই।। আমার ঢাকার বাসায় আমি এবং আমার ওয়াইফ থাকতাম।। তাকে কিছু বলিনি।। পাছে, ভয় পায় বা আমাকে খারাপ ভাবে।।

আমার আচার আচরণ দেখে আমার ওয়াইফের মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে লাগলো।। এদিকে আমি মোটামুটি শপথ করেছি যে তাকে কিছু বলবো না।। যাই হোক, আমার ওয়াইফের পিড়াপীড়িতে পড়ে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম আবার দেশের বাড়িতে যাবো।। সেদিন শকালেই আবারো চট্রগ্রামের উদ্দেশে রওনা হই আমরা।। এবার আমার বউ ছিল সাথে।।
দেশের বাড়িতে আমরা ২দিন ছিলাম।। হটাত একদিন বিকেলে ফোন এলো অফিস থেকে।। কিছু বিদেশী ক্লায়েন্ট এসেছে।। আমার উপস্থিতি খুব করে দরকার।। আমার ছুটির তখনো ২দিন বাকি।। তাই প্রথমে আমার বউ খুব করে আপত্তি জানালো।। কিন্তু, তাকে বুঝিয়ে বলতে সে মেনে নিলো।। বুঝতে এবং বুঝাতে ভালোই সময় ব্যায় হলো।। সেদিন রাত ১১টার দিকে পুনরায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা হই আমরা।।

এদিন আমি গাড়ি খুব ধীরে চালাচ্ছিলাম।। স্পীড কোনো অবস্থাতেই ৪০-৫০ এর বেশি উঠাচ্ছিলাম না।। আমি গাড়ি চালাচ্ছি।। আমার বউ পাশে বসে গান শুনছে।। আস্তে আস্তে আবারো সেই রাস্তায় চলে এলাম, যেখানে গতদিন এক্সসিডেন্টটা করেছিলাম!! খারাপ লাগা ভাবটা ফিরে এলো আবার।। রাস্তার উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছি।। হটাত আমাকে চমকে দিয়ে রাস্তার ঠিক ঐখানটায় আজকেও ঐ লোকটিকে দেখতে পেলাম।। সাথে সাথে আমার বউকে ধাক্কা দিয়ে বললাম, সে কি কিছু দেখতে পাচ্ছে কিনা!! গান শুনতে থাকলেও তার চোখ খোলা ছিল।। আমি ধাক্কা দিতেই কান থেকে হেডফোন নামিয়ে বলল, “আশ্চর্য!! এই লোক হটাত করে কোত্থেকে উদয় হলো!!” আমার আর প্রশ্ন করা লাগলো না।। যা জিজ্ঞেস করতে নিয়েছিলাম তার উত্তর এমনিতেই পেয়ে গেলাম।। ব্রেক করে গাড়ি থামালাম।।

আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, গাড়ি থামানোর সাথে সাথে লোকটা যেনো হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।। আমার বউয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও নিজেও ব্যাপারটা ধরতে পেরেছে।। ভয় সতন্ত্র গলায় বলল, “লোকটা কোনদিকে গেলো??”

আমার কাছে কোনো উত্তর ছিল না।। শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম খোলা রাস্তার দিকে।।

।। রাতের অ্যাম্বুলেন্স ।।

আজ কাজে আসতে কামালের একটু দেরী হয়ে যায় । এখন বাজে সকাল প্রায় ৯ টা ৪৫ মিনিট । হাজিরা খাতায় সই করতে করতে কামাল একবার আশে পাশে চোখ বুলায় তারপর ঝট করে হাজিরের ঘরে লিখে ফেলে ৯টা ৩০ মিনটি । তার পর পাশের টেবিলে বসা এক বুড়োকে লক্ষ্য করে বলে- বুঝলেন কলিম
চাচা বউডার শরীর বেশি ভালা না । আট মাস চলতাছে । অনেক চিন্তায় আছি । বাসায় কেউ নাই যে দেখভাল করবো । কি যে করি ? একটু থেমে আবার বলে -আমারই সব করতে হয় । তার উপর টাকা পয়সার সমস্যায় আছি ।



-একটা কামের লোক রাখতে পারো না মিঞা ? পাশের টেবিলে বসে থাকা ৬০ বছর বয়সের বৃদ্ব কলিম মিয়া কথাটা বলে কিছুটা থামে , তারপর আবার বলে - জানো তো পরপর তিনদিন লেট হইলে এক দিনের বেতন পানিতে যাইবো । তোমার এ মাসে ওলরেডি ৭ দিন লেট । মানে ২ দিনের বেতন নাই । ব্যাপারটা মাথায় রাইখো ।

কামাল কিছু বলে না মাথা নাড়ায় । সে ব্যাপারটা জানে ।



সরওয়াদি হাসপাতালের এ্যম্বুলেন্স ড্রাইভার হিসাবে গত মাস দু’য়েক আগে যোগ দিয়েছে কামাল । ওর কাজ হলো সারাদিন এ্যম্বুলেস চালান । যেদিন কাজের চাপ থাকে সেদিন এতো বেশি থাকে যে খাওয়া দাওয়ার সময় থাকে না । আর যেদিন কাজের চাপ কম থাকে সেদিন দেখা যায় দু’একটা ট্রিপ মারার পরই বসে বসে ঝিমোতে হয় । তবে কাজের মধ্যেই থাকতে বেশি ভাল লাগে কামালের । তার উপর কখন ও সখন ও দু’পয়সা উপরি পাওয়া যায় । শুরুতে রুগি ,লাশ পরিবহন করতে একটু খারাপই লাগত । কিন্তু এখন তা সয়ে গেছে । ও চিন্তা করে দেখেছে যাত্রী পরিবহন করার চেয়ে রুগি আর লাশ পরিবহন করাই নিরাপদ। হাউকাউ চেচামেচি কম করে । সই করে এ্যম্বুলেন্সের চাবির জন্য দোতালায় উঠতেই শান্তি দিদির সঙ্গে দেখা হয়ে যায় । তিনি প্রায় দৈড়ে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দিকে যাচ্ছিলেন । শান্তি দিদি হাসপাতালের সিনিয়র নার্স । কামালকে বেশ স্নেহ্ করে । ঠিক কামালের মতো দেখতে নাকি তার এক ভাই ছিল ।

- কি দিদি কি খবর ?

- ২১ নম্বর রুগির অবস্হা বেশি ভাল না রে । স্যারদের খবর দিতে গেছিলাম । তোর বউ কেমন আছে ? কোন চিন্তা করবি না আমরা আছি । শান্তি দিদি দাঁড়ায় না ।

কামাল কিছু বলার সুযোগ না পেয়ে হেসে অফিস রুমে ঢুকে যায় । সেখান থেকে চাবি নিয়ে সোজা বাহার ভাইয়ের চায়ের দোকানে । চাবি নেয়ার মানে কামাল গাড়ি সহ রেডি । কল আসলেই চলে যাবে । বাহার ভাই এর দোকানে কামাল এলাহি ভাইকে দেখতে পায় । আরো কয়েকজনকে নিয়ে বসে চা খাচ্ছে আর হাত নেড়ে নেড়ে কি যেন বলছে । এলাহি ভাই এই হাসপাতালের ড্রাইভার ইউনিয়নের নেতা । তার হুকুম ছাড়া হাসপাতালের একটা গাড়িও চলে না । তার কথাই আইন । কামাল কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে বলে ভাই কেমন আছেন ?

সালামের সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়ে এলাহি মিয়া বলে - কি ব্যাপার কামাল আজকাল থাকো কৈই ? ইউনিয়িন অফিসে আসো টাস না । শুধু কি রুগিগো সেবা করলে চলবো ? নিজের ভবিষ্যতের দিকে ও তো তাকাইতে হইবো, না কি ? সর্মথনের আশায় এলাহি মিয়া পাশে বসে থাকা অন্য সবার দিকে তাকায় । সবাই মাথা নেড়ে তাকে সর্মথন দেয় ।

- লিডার কামাল মিয়ার তো বাচ্চা হইবো । পাশে বসে লম্বা মতো তেল চোরা জহির বলে ।

-আবে কামালের বাচ্চা হইবো নাকি ? ক’ওর বউ এর বাচ্চা হইবো । আরেকজন কথাটা বলার সাথে সাথে সবাই হো হো করে হেসে উঠে । কামাল কিচ্ছু বলে না । মুখে হাসি হাসি একটা ভাব করে রাখে । যেন খুব মজা পাচ্ছে ।

-বস । চাটা খাও । তয় ভাই বাচ্চা হওনের পর কিন্তু ইউনিয়নের জন্য সময় দিবা । আমি তো শালায় তোমগো লাইগা খাটতে খাটতে শেষ । আর যে কোন দরকারে আমার ফোন দিবা । তোমগো লাইগা আমার জান কোরবান । বলে এরাহি মিয়া দল বল নিয়া চলে যায় ।

কামাল বুঝতে পারে আজকের দিনটা ওর বসে বসেই কাটবে । চায়ের দোকানে দীর্ঘ সময় বসে থাকার পর ও কোন কল আসেনা । কামাল উঠে ওর এ্যম্বলেন্সের কাছে চলে আসে । ১৭ নম্বর এ্যম্বুলেন্স । দরাজা খুলে ও এ্যম্বুলেন্সে উঠে রেডিও চালিয় কতোক্ষন খবর শুনে ।

এমন সময় সোলেমান এসে একটা ঠিকানা দিয়ে যায় । গুলশান যেতে হবে । রুগী নিয়ে আসতে হবে । কামাল বের হয়ে যায় । যাবার সময় একটা কলা আর বন রুটি নিয়ে নেয় বাহার এর দোকান থেকে দুপুরের খাবার হিসাবে খাবে বলে । খাতায় লিখে রাখতে বলে ও টান দিয়ে গাড়ী নিয়ে বেড় হয়ে যায় । হাসপাতালের গাড়ি চালালে আরেকটা সুবিধা হলো রাস্তায় সাজেন্টের সঙ্গে ঝামেলায় পরতে হয় না । কথায় আছে এ্যম্বুলেন্সের সাইরেন শুনলে প্রধান মন্ত্রীর গাড়ীও নাকি সাইড দেয় । কথাটা অনেকটা সত্য ।

দেশের অবস্থা খুব একটা ভাল না । রাস্তা ঘাটে প্রচুর জ্যাম । তাড়াতাড়ি গুলশান থেকে ফিরতে পারলেই দ্বায়িত্ব শেষ করে বাসায় ফেরা যায় । মায়া বাসায় একলা । দুবার এর মধ্যে ওর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে । মায়া বলেছে ও ভাল আছে । কোন সমস্যা নাই । তাই ও এখন অনেকটা নিশ্চিন্তে আছে । গুলশান থেকে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায় । দোতালায় চাবি জমা দেবার জন্য আসতেই কামাল খবর পায় শান্তি দিদি ওকে কয়েকবার খুঁজেছে । অফিস রুমে খবর দিয়ে রেখেছে যেন ও আসলেই যেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডে চলে আসে ।

৭ নম্বর ওয়ার্ডটা খুব বড় । ঢুকতেই হাতের ডান পাশে নার্সদের বসার জায়গা । শান্তি দিদি সেখানেই বসে আছেন । ওকে দেখে বলেন- কামাল এদিকে আয় । তোর সঙ্গে কথা আছে ।

-দিদি বাসায় যেতে হবে । তাড়াতাড়ি কও কি কইবা । কামাল একটা খালি চেয়ার টেনে বসে পরে ।

-তোর বউ কেমন আছে ?

-আছে কোনরকম । দিদি রাইত হইছে । কাজের কথা কও । বউডা একলা ঘরে । কামাল তাড়া দেয় ।

-আরে বছ না ছেমরা । কাজ ছাড়া কি তোরে ডাকছি ? কামাল মাথা নাড়ে দিদি ঠিক বলেছ কাজ ছাড়া ডাকেনি । শুন ২১ নম্বর বেডের রুগীডা মারা গেছে । লাশ মর্গে আছে । তোরে একটু দিয়া আইতে হইবো ।

-কি কও ? এ্যই রাইতের বেলা ? জাকিরের তো নাইট ,ও’রে কও ? কামাল চলে যাবার জন্য দাঁড়িয়ে যায় ।

-আরে শুন ; শুন; তোর তো টাকা দরকার । মালদার পাটি ; পাথের খরচ বাদ দিয়াও মনে হয় হাজার পাঁচেক দিবো । জাকির গেছে সাভারে আসলে কমু । ও মনে হয় রাজি হইয়া যাইবো । সামনে তোর পোলা পাইন হইবো হাতে টাকা পয়সা দরকার তাই আমি তোরে কইলাম । এখন যাওয়া না যাওয়া তোর মর্জি ।

পাঁচ হাজার ! কামাল একটু দ্বিধায় পরে যায় । আসলেই তো ওর হাতে তেমন টাকা পয়সা নাই । প্রতি মাসে মাটির ব্যাংটাতে এতোদিন যা জমিয়েছে সব মিলিয়ে হয়তো হাজার পাঁচেকই হবে । এ সময় পাঁচ হাজার টাকা হলে বাচ্চা হওনের সময় অনেক নিশ্চিত হওয়া যায় ।

-কিন্তু দিদি মায়া তো বাসায় একলা । দেরী করলে ভয় পাইতে পারে ।

-আরে ছেমরা কয় কি ? ভয় পাইবো কেন ? লাগলে আমি যাওনের সময় একবার দেইখা যামু । শান্তি দিদি খাতায় কিছু লিখতে লিখতে বলে ।

- কৈই যাইতে হইবো ? মাথা চুলকাতে চুলকাতে কামাল জিজ্ঞাসা করে ।

-কুমিল্লা । শান্তি দিদি লেখা বন্ধ না করেই বলে ।

-ও মা কও কি দিদি ? কুমিল্লা ! কামাল আতকে উঠে । তাইলে তো ফিরতে ফিরতে ভোর হইয়া যাইবো ।

-আরে না । ভোর হইবো না । এ্যই ধর তিনটা চারইটা বাজতে পারে ।

-হেইডা তো ভোরই । কাইল আবার ডিইটি আছে না ? কখন ঘুমামু কখন কামে আমু ।

-কাইল ১২ দিকে আবি ।সুপার স্যাররে আমি কইয়া রাখুম । কোন অসুবিধা হইবো না । শান্তি দিদি ফাইলটা আলমারিতে রাখতে রাখতে বলে ।

-একটা কথা কও তো দিদি তোমার এতো গর্জ কেন ? ভালাই পাইছো মনে হয় ।

-আরে ছেমরা মর । আমার আবার গর্জ কি ? তুই যখন মরবি তখন তোর লাইগাও আমি মাইষের হাতে পায়ে ধরমু ।

-আহা দিদি রাগ করো কেন ?

-শুন । দিদি কামালের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে । যে মরছে সে অনেক বড় লোক আছিল । বড়লোকগো যেমন খাসলত ভালা হয় না । এই ব্যাডারও তাই আছিল । শেষ বয়সে তিনডা বিয়া করছে । কচি কচি মাইয়া গুলি এই এক সপ্তাহ বুইড়াডার লাগি যা করলো । এখন মরার পরও লাশ নিয়া বইয়া আছে । তুই যাইয়া পৌছে দিয়ে আয় । তোর কাম শেষ । শান্তি দিদি ওর হাতে একটা সাদা খাম দেয় ।

-কি এইডা ? কামাল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে ।

-কি আবার টাকা আর ঠিকানা যেহানে যাবি । যা গাড়িতে গিয়া ব।

-কিন্তু দিদি এতোটা পথ এই রাইতের বেলায় লাশ নিয়া একলা যাইতে পারুম না ।

-আরে ছেমড়া একলা যাবি কেন । বুইড়ার তিন বউ যাইবো তোর লগে । দেখিস আবার না তুই বুইড়া হইয়া যাছ ।নিজের রসিকতায় নিজেই শান্তি দিদি হেসে উঠে ।

-কি যে কওনা দিদি ? আমি তাইলে গাড়িতে যাই ।

-যা । আর শুন বউরে নিয়া চিন্তা করবি না । আমি তোর দিদি আছি । যা ভাগ ।

কামাল বের হয়ে যায় । হঠাৎ করে টাকাটা পেয়ে মেজাজ ভাল হয়ে গেছে । যেতে যেতে মায়ার সঙ্গে ফোনে কথা বলে । মায়াকে জানায় - ওকে এখন কুমিল্লা যেতে হচ্ছে , ফিরতে রাত হবে । মায়া যেন কোন চিন্তা না করে । যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ও ফিরে আসবে ।

কামাল নীচে নেমে দেখে লাশ ওর গাড়িতে তোলা হয়ে গেছে । মনির মিয়া গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে ।

এতো ভারী কারো শরীর হয় ? চাইর জন মিল্লাও তুলতে যে কষ্ঠটা হইলো । কামালের দিকে তাকিয়ে হাত ঢোলতে ঢোলতে কথা গুলো এক নি:শ্বাসে বলে মনির মিঞা ।

-অনেক ভারী নাকি ? পাল্টা জিজ্ঞাসা করে কামাল তাকায় এ্যম্বুলেন্সের ভেতরে । বাম পাশের বেডের উপর লাশটা রেখে সাদা একটা চাদর দিয়ে লাশটা ডেকে দেওয়া হয়েছে । মিনির মিঞা বাম দিকের দরজা বন্ধ করে দেয় । কালো বোরকা পরা লম্বা মতোন দু’জন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির পাশে । একবার কামালের দিকে তাকিয়ে দু’জন নীচু স্বরে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে । কামালের কান পর্যন্ত সে কথার আওয়াজ পৌছায় না । কাগজ নিয়ে আরেক জন বোরকা পড়া মহিলা কামাল এর কাছে এসে বলে - আপনিই কি যাবেন ভাই ?

-কামাল উপরে নীচে হা সূর্চক মাথা নাড়ে ।

-তা হলে চুলুন রওনা হই । মহিলা মিনির মিয়ার হাতে কয়েকটা একশ টাকার নোট দিয়ে অন্য দুজন মহিলার দিকে তাকিয়ে বলে - কৈই তোমরা আস ।

সবাই উঠে বসতেই কামাল এ্যম্বুলেন্স ছেড়ে দেয় । ঘড়িতে তখন কাটায় কাটায় রাত ১২ টা বাজে ।

রাস্তায় খুব একটা গাড়ি নেই । সোডিয়াম বাতির আলোয় পথ ঘাট কেমন ভৌতিক মনে হচ্ছে । কামাল এমনিতে ভুত প্রেত বিশ্বাস করে না । তবু এ নির্জন রাতে কেন যেন ওর শরীরে কাটা দিয়ে যায় । গাড়ির গতি ঘন্টায় ৬০ রাখে কামাল । মনে মনে ঠিক করে কোন অবস্থাতেই গাড়ির গতি ৬০কি.মি: এর উপড় নেবে না । কামালের শশুরই ছিল ওর ওস্তাদ । সে শিখিয়েছে রাতের বেলা রাস্তা ঘাট যতোই ফাঁকা হোক না কেন একটা নিদিষ্ট গতিতে গাড়ী চালালে কোন এক্সিডেন্ট হয় না । কামাল কথাটা বিশ্বাস করে । তাই আগে বাগে মনে মনে গাড়ির গতি ঠিক করে নেয় ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার ।সংসদ ভবন এর সামনে আসতেই বৃষ্টি শুরু হলো । কামাল মনে মনে বলে- বৃষ্টি হবার আর সময় পেল না । কামাল গাড়ীর গতি আরো কমিয়ে আনে । আসাদ গেটে আড়ং এর সামনে আসতেই সিগনাল পরে গেল । কামাল একবার ভাবলো টান দিয়ে চলে যাবে কিনা ? কিন্তু পরক্ষনেই ভাবলো; না । অস্থির হবার কিছু নাই ।

ও গাড়ী থামিয়ে গ্রীন বাতির জন্য অপেক্ষা করে । রাস্তা প্রায় ফাঁকা । কোন জন মানব নেই । ডানে বামে তাকালে ওর কেমন একটা গা ছমছম করে উঠে । দুর ! যতোসব ফালতু চিন্তা ভাবনা । এক কিলোও আসতে পারলাম না আর ভুতের চিন্তা পেয়ে বসেছে । নিজেক নিজেই সান্তনা দেয় কামাল । হঠাৎ বাম পাশের জানলা দিয়ে একটা মুখ উকি দিতে চমকে উঠে চিৎকার করে কামাল কে ? কে ?

জানালায় দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে আছে এক বুড়া । মাথায় এলোমেলে সাদা চুল । দু’হাত দিয়ে জানালার কাঁচ চেপে আছে । দাঁত গুলোও কেমন ফাঁক ফাঁক । লোকটা বলে উঠে- দে ; দে; টাকা দে । ভাত খামু টাকা দে ।

মেজাজ খারাপ হয়ে যায় কামালের । মনে হয় নাইমা দুইটা চড় মারে । হারমজাদা ভিক্ষা চাওনের আর কোন সময় পায় না । মর যাইয়া । ও শার্ট ফাঁক করে বুকে থুতু দেয় ।

মনে মনে গজগজ করলেও বুক পকেট হাতরে পাঁচ টাকার একটা নোট বেড় করে লোকটার দিকে বাড়িয়ে ধরে । লোকটা টাকা না নিয়ে বলে -ভাগ । ভাগ । তাড়াতাড়ি ভাগ ।

কথার আগা মাথা বুঝতে পারে না ও । কামালের মনে করে হয়তো পাগল- টাগল হইবো । ঠিক এই সময় ওর পেছনের ছোট জানলায় টোকা দেবার শব্দ হয় । কামাল ওর ঠিক পিঠ লাগোয়া যে জানালাটা সেটা একটু ফাঁক করে ও ০পেছনে না তাকিয়েই বলে- জ্বি বলেন ?

-কি হয়েছে ? পেছন থেকে তিন জনের একজন জিজ্ঞাসা করে ।

-না কিছুনা ।

সিগনাল ছেড়ে দেওয়ায় কামাল গাড়ী টানদেয় । কামাল বাম পাশের মিররে তাকিয়ে বুড়োটাকে আর দেখতে পায় না । মনে মনে ভাবে আরে গেলো কোথায় ? ও একটু সামনে ঝুকে ফুটপাতটা দেখতে চেষ্টা করে ;কিন্তু বুড়োকে আর দেখতে না পেয়ে বেশ অবাক হয় ও ; তারপর ফার্মগেটের দিকে টার্ন্ নেয় ।

পেছন থেকে ফিস ফিস করে কথা বলার শব্দ কানে আসে কামালের । এই নিরবতায় তাতে ও কিছুটা সাহস পায় কামাল । মাঝে মাঝে দু’একটা গাড়ি শো শো করে পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে । রাতে রাস্তায় বেশির ভাগ ট্রাকই চলে । দানবের মতো ট্রাকগুলি ঘোত ঘোত শব্দ করে চলে যায় । সায়দাবাদ ; যাত্রাবাড়ি হয়ে কামাল গাড়ি চালাতে থাকে শনির আখড়া দিয়ে কুমিল্লার দিকে । এ রাস্তাটা ওর বেশ পরিচিত । একটানা বৃষ্টি হচ্ছে । মনে হয়ে আজ সারা রাতই হবে । মাঝে মাঝে বিকট শব্দে বিদ্যুত চমকাচ্ছে । শীত; শীত একটা ভাব চলে এসেছে । কামাল পানির বোতল খুলে পানি খায় । আশে পাশের দোকান পাট সব বন্ধ । আজ মনে হচ্ছে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যাও কম । পেছন থেকে আবারও টুক টুক করে শব্দ হয় ।

- জ্বি বলেন ? কামাল মাথাটা একটু পেছনে নিয়ে বলে ।

-আমরা একটু নামবো ? এক জন বলে । কামাল অবাক হয় ।

-এখানে ?

-জ্বি । আপনি কি একটু থামেন ।

-মনে হয় দাউদকান্দি এসে পরেছি । সেখানে থামলে হতো না ?

-না । সামনের বড় গাছটার কাছে থামুন । পেছন থেকে অন্য একটি কন্ঠ বলে উঠে । কথাটা আদেশেয মতো শুনার ওর কাছে । কামাল এ্যম্বুলেন্সটা রাস্তার পাশে একটা বড় গাছের গা ঘেষে দাঁড় করিয়ে দেয় । পেছনের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ও জানালাটা দিয়ে পেছনে তাকায় । আধো আলোয় যা দেখতে পায় তাতে কামাল এর মাথা ঘুরে উঠে । সিটের উপর মৃত ব্যক্তি বসে আছে । শুধু বসেই নেই ; হাত নেড়ে নেড়ে কি যেনো বলছে । ও প্রচন্ড রকমের ভয় পেয়ে যায় । কামাল পেছন থেকে চোখ সরিয়ে নিজেকে আড়াল করে রাখতে চেষ্টা করে । সামনে তাকালে দু’ছায়া দেখতে পায় ও । কোন শরীর নেই । শুধু বোঝা যাচ্ছে দেহের অস্তিত্ব । বাতাসে ভেসে ভেসে ছায়া দু’কামালের দিকেই আসছে । ভয়ে ওর জান বের হয়ে যাবার জোগার । মনে হচ্ছে মরে যাবে । নিজেকে সিটের সঙ্গে চেপে রাখে ও। মনে হচ্ছে নিজেকে সিটের ভেতর ডুকিয়ে ফেলতে পারলে ভয় কিছুটা কমে যেতো । মনে মনে আল্লাহ্ ; আল্লাহ্ করতে থাকে । ছায়া দু’টো ওর পাশ দিয়ে পেছনে চলে যায় । পেছন থেকে হঠাৎ হাসির শব্দ ভেসে আসে । কামাল সাহস সঞ্চয় করে আবার পেছনে তাকায় ।

লাশটা গাড়ি থেকে নেমে মাটিতে দাঁড়িয়ে আছে । শরীরে জড়ানো মুদ্দারের কাপড় এলোমেলো ঝুলে আছে । লোকটার হাতে সাদা কাপরের একটা পুটলির মতো কিছু । দু’জন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে লোকটার ঠিক সামনে । একজন পুটুলিটি একটু ফাঁক করেতেই কামাল একটি শিশুর মাথা দেখতে পায় ।

লোকটা পুটুলিটা গাড়ির ভেতরে ছুরে মারে । প্রায় সাথে সাথে হুরমুর করে সবাই গাড়িতে উঠে পরে গাড়িতে। কামালের শরীর শক্ত হয়ে গেছে । একবার ভাবলো গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দেবে কিনা । কিন্তু কোথায় যাবে ? তার চেয়ে ভাল কিছু না দেখার ভান করে থাকলে হয়তো জানে বেচে যাওয়া যাবে । ও মনে মনে প্রার্থনা করে আল্লাহ্ বাঁচাও । পেছন থেকে টোকা দেবার শব্দ আসতেই কামাল চমকে উঠে - গাড়ি চালান । ভারী এটা কন্ঠ বলে । কামাল চাবিতে হাত দিতেই গাড়ি স্টাট হয়ে যায় । কামালের মাথা কাজ করছে না । গাড়ি রাস্তায় উঠার সময় সাইড মিররে দেখতে পায় ছায়া দু’টো এখনও দাঁড়িয়ে আছে । হাতে ধরে আছে সাদা মতো দু’টো পুটুলি । এখন আর বৃষ্টি পড়ছে না ; তবে মাঝে মাঝে বিদ্যূত চমকাচ্ছে । মেইন রাস্তা ধরে গাড়ি চালাচ্ছে কামাল । ও চালাচ্ছে না বলে গাড়ি নিজে নিজে চলছে বললেই ভাল শুনায় । কেননা এই মুর্হুতে গাড়ির উপর ওর কোন কন্টোল নেই । ও শুধু চুপচাপ বসে আছে । গাড়ি নিজে নিজে চলছে । পেছন থেকে চুক চুক শব্দ ভেসে আসছে । কামাল নিজেকে সামলে সাহস সঞ্চয় করে আবার পেছনে তাকায় । দেখতে পায় দু’জন করে দুপাশে বসে সবাই সামনের দিকে ঝুকে বাচ্চাটাকে খাচ্ছে। দু’জনের হাতে বাচ্চাটার ছেড়া পা ; অন্য দু,জনের হাতে বাচ্চাটার ছেড়া দুটো হাত । বাচ্চার মাথাটা নীচে পড়ে আছে । চোখ দুটো খোলা । কামাল এ সমগ্র শরীর গুলিয়ে উঠে । বমি পেয়ে যায় । কি করবে বুঝতে পারে না । সারা শরীর কাঁপছে । মনে হচ্ছে ও মরে যাবে । সামনে ডান পাশে একটা বাড়ী দেখা যাচ্ছে । বারান্দায় আলো জ্বলছে । কামাল সমস্ত শক্তি দিয়ে ব্রেক চেপে ধরে । এ্যম্বুলেন্সটি একটা প্রচন্ড ঝাকি খেয়ে থেমে যায় । পেছনে বসে থাকা সবাই ধাক্কা খেয়ে কামাল এর দিকে চলে আসে । পেছন থেকে হালকা একটা কাশির শব্দ শোনা যায় । পুরুষ কন্ঠে কেউ একজন বলে - কি হলো ; কি হলো ? আগে বলেছিলাম তোরা ধৈর্য্য ধর । আমার কথা শুনলি না । এখন হলো তো । ড্রাইবার হারামজাদা সব দেখেছে । ধর হারামজাদাটারে । তারপর আবারও কাশির শব্দ । ছিড়ে টুকরা টুকরা করে ফেল । কামালের পেছনের জানালা দিয়ে একটা হাত বেড় হয়ে আসে কামালের দিকে -থামলি কেন চালা চালা । হাতটা থেকে তখনও টপ টপ করে রক্ত পড়ছে । কামাল সামনের দিকে সড়ে এসে পেছনে তাকালে দেখতে পায় শেয়ালের মতো একটা মুখ । চোখ দুটো জ্বলছে । জিহ্বাটা বের হয়ে আছে । কামাল জ্ঞান হারিয়ে সিটের উপর লুটিয়ে পরে ।

পরিশেষ : পরের দিনে ভোরে মসজিদে ফজরের নামাজ শেষে ফেরার সময় মুসুল্লিরা কামাল কে অজ্ঞান অবস্থায় পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে । জ্ঞান ফিরে আসার পর কামাল আর কিছু মনে করতে পারে না । আর ওর এ্যম্বুলেন্সটি থেমে ছিলে রাস্তার পাশের একটি বাড়ীর সামনে । এ্যম্বুলেন্সটির পেছনে একটি সাদা কাপড়ের মোড়ান অবস্থায় পাওয়া যায় একটি বাচ্চা ছেলের দেহের অবশিষ্ট্র অংশ ।